ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘সরকার স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৯, ২৫ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সরকার স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘মামলাজট নিরসনে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রমের মানোন্নয়ন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবিধানিক সুরক্ষা বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের একজন দরিদ্র-অসহায় নাগরিককে তার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে পুরোপুরি সমর্থ হবে না, যদি কিছু আইনি সহায়তা নিয়ে তার পাশে না দাঁড়ানো যায়। তাই বর্তমান সরকার শুধু জনগণের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে না, একই সঙ্গে জনগণের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে। কারণ, বর্তমান সরকার আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্বাধীন বিচারব্যবস্থায় বিশ্বাসী।’

আনিসুল হক বলেন, ‘একটি উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি, অবাধ বিচার, আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এবং আইনের দৃষ্টিতে সমতা নিশ্চিত করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেখা যায়, সমাজের অন্য যেকোনো অংশের চেয়ে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরাই অপরাধী ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের সংস্পর্শে বেশি আসে। কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় এই দরিদ্র মানুষরাই আটক, রিমান্ড, বিচার, দোষী সাব্যস্তকরণ, ডিটেনশন, মুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে রায়ের ক্ষেত্রে আপত্তি জানানো, আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। সম্পত্তি, কল্যাণ বরাদ্দ, সামাজিক গৃহায়ণ, উচ্ছেদ, পারিবারিক প্রভৃতি দেওয়ানী ও প্রশাসনিক মামলায় আইনি সহায়তা সহজলভ্য না হওয়ায় তাদেরকে ন্যায়বিচারপ্রাপ্তি হতে বঞ্চিত করা হয়। সুতরাং, যত দিন সমাজে গরিব মানুষ থাকবে, তত দিন মানবাধিকার এবং সমতা তুলে ধরার জন্য আইনি সহায়তার আবশ্যকতা থাকবে। এ কারণে আইনের শাসন এবং আইনের দৃষ্টিতে সমসুরক্ষার পথে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিরাপদ পরিভ্রমণের জন্য আইনি সহায়তার ব্যবস্থা থাকা দরকার।’

আইনমন্ত্রী জানান, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরো গঠনমূলক ও সুসংগঠিত করতে ‘সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি সরকারি আইনি সহায়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, অধস্তন আদালতগুলোতে প্রায় ২৮ লাখ মামলাজট রয়েছে। এ মামলাজটের কবল থেকে বিচারব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) কোনো বিকল্প নেই। ইতিপূর্বে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে উৎসাহিত করে বেশকিছু আইন প্রণয়ন করা হলেও জেলা পর্যায়ে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য কোনো অফিস না থাকায় জনগণ এসব আইনের সুফল পাচ্ছিল না।

তিনি বলেন, বর্তমানে মামলাজট নিরসনে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজে লাগানোর বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ সংশোধন করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, সংশোধিত আইনে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারকে এডিআরের মাধ্যমে যেকোনো বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে বিরোধসমূহ জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠিয়ে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মধ্যস্থতায় আপোশ-মীমাংসা করার আইনগত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ক্ষমতা কার্যকর করতে দেওয়ানী কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারার সংশোধনী বিল আকারে বর্তমানে মহান জাতীয় সংসদে পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি কার্যকর হলে মামলাজট কমার পাশাপাশি জনগণ অল্প সময়ে, অল্প ব্যয়ে ও সহজে বিচার সেবা পাবেন।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং অতিরিক্ত সচিব  মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৭/নঈমুদ্দীন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়