সরকারকে ৯ দিন সময় দিল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিতে সরকারকে নয় দিনের সময় দিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’।
একই সঙ্গে এ সব দাবি আদায়ে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’র কমিটি গঠনের মাধ্যমে ‘নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে জাতীয় নেতারা দেশব্যাপী ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে প্রচার চালাতে সভা-সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে নাগরিক সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
নাগরিক সমাবেশের মঞ্চের পেছনে বড় ব্যানারে লেখা ছিল-‘কার্য্কর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন’।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা এই নাগরিক সমাবেশ থেকে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিতে।’’
“আমরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এই গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, শ্রেণী-পেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে “বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য” এর কমিটি গঠন করুন। এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ গণজাগরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখুন।”
সরকার স্থানীয় নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে ঘোষণাপত্রে দাবি করেন শহীদুল্লাহ।
দেশ রাজনৈতিক সংকটে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাস, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবী মামলা, গণগ্রেপ্তারে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশে এই গণতন্ত্রহীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা কার্যত বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
সংবিধান অনুযায়ী সকলের জন্য সুযোগের সমতা, কল্যাণমুখী অর্থনীতি এবং জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচারবিভাগের যুগোপযোগী সংস্কার করা হবে বলেও জানান জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এই নেতা।
ঘোষণাপত্রে নাগরিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের ৫ দফা দাবি ও ৯ দফা লক্ষ্যের সঙ্গে তারা একাত্মতা প্রকাশ করছেন।
বিকেল ৩টায় শিল্পী সুরাইয়া পারভীন ও মায়শা সুলতানার কণ্ঠে ‘আমাদের ন্যায্য অধিকার যত, আমাদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সমাবেশের প্রধান অতিথি যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান।
স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বায়ক ড. কামাল বলেন, ‘‘দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আজ তা পুনরুদ্ধারে আমরা সমবেত হয়েছি। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণ বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। আজ জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিও হচ্ছে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা; রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। আমি আশা করি, মঞ্চে উপবিষ্ট জাতীয় নেতারা জনগণকে উজ্জীবিত করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ও গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে জনগণকে অনুপ্রাণিত করে তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখবেন।’
অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে-দাবি করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘‘ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’’
এ সময় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে সকল শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দাবি করা হয়। একই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করা হয়।
কামালের সভাপতিত্বে ও নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, জাসদের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণসংহতির আহ্বায়ক জোনায়েদ সাকি, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসীন মন্টু, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।
সমাবেশে অংশ নেন বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী, ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি সুলতান মো. মনসুর, বিএনপি নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মজিবুর রহমান, আহমেদ আবদুল কাদের, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান ও আসাদুর রহমান খান।
বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সমাবেশে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮/রেজা/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন