ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সাঁওতাল হয়রানি বন্ধ হোক

শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১২ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাঁওতাল হয়রানি বন্ধ হোক

গাইবান্ধায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় চিনিকলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির দখল নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল মারা গেছেন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন কয়েকজন ৷ শান্তিপ্রিয় ক্ষুদ্র এই নৃগোষ্ঠীর মানুষকে নিয়ে অপরাজনীতির খেলা যেমন দুঃখজনক, তেমনি উদ্বেগজনকও বটে।

 

গণমাধ্যমগুলো স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছে, মূলতঃ ভূমি দখলের ফাঁদে ফেলে হেনস্তা করা হচ্ছে জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামের সাঁওতালদের। তারা রংপুর চিনিকলের আওতাধীন গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জায়গায় বসতি গড়েছে, কিন্তু তা  নিজের ইচ্ছায় নয়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে। ওই সব নেতাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন উচ্ছেদ ও হামলায়। সাহেবগঞ্জে বসতি উচ্ছেদের সময় রোববার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলিতে সাঁওতালপল্লীর দুজন নিহত হয়েছেন। ওই দিনের সংঘর্ষে আহত আরেক ব্যক্তি বৃহস্পতিবার তার বাড়িতে মারা গেছেন। হয়রানির ভয়ে স্বজনরা তাকে চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে যাননি। ইক্ষু খামারের জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সাঁওতালরা। শুধু তাই নয়, জয়পুর ও মাদারপুর গ্রামের সাঁওতালদের রীতিমতো অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়রা সাঁওতাল পরিবারের লোকজনদের যেখানে পাচ্ছে সেখানেই মারধর করছে। এমনকি তাদের হাটবাজারও করতে দেওয়া হচ্ছে না।

 

সাঁওতালদের দাবি, ১৯৬২ সালে রংপুর চিনিকলের জন্য সাহেবগঞ্জে আখ চাষের শর্তে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহণ করা হয়। চাষ না করা হলে জমি ফেরতের ব্যাপারেও আলোচনা হয়। শুরুতে চাষ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে এ জমিতে আর আখ চাষ হচ্ছে না। মিল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা জমি লিজ নিয়ে অন্য ফসলের আবাদ করছেন। দুই বছর আগে সাঁওতালরা পূর্বপুরুষের জমি ফেরত পেতে আন্দোলন শুরু করেন।  এতে শামিল হয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা প্রথমেই জমি দখলে নিতে উসকানি দিতে থাকেন।

 

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরাই প্রথম সংগঠিত হয়ে সশস্ত্র গণসংগ্রাম করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে তিন শতাধিক সাঁওতাল তরুণ। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর সেই সাঁওতালদেরকে রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই,  বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সাঁওতাল হত্যা ও নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার  নিশ্চিত করা হোক। এর পাশাপাশি মিল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও উস্কানির যে অভিযোগ উঠেছে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হোক  এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক। এছাড়া মামলার মাধ্যমে সাঁওতালদের যে হয়রানি করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ নভেম্বর ২০১৬/শাহেদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়