ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাতক্ষীরার ‘তালা’ ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুঁকিতে

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাতক্ষীরার ‘তালা’ ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুঁকিতে

আর্সেনিকে আক্রান্ত জালাল মোড়লের পরিবার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সাতক্ষীরার তালা উপজেলা এখন ভয়াবহ আর্সেনিক ঝুঁকিতে। এ উপজেলার অন্তত দেড় লাখ মানুষকে প্রতিনিয়ত এই ঝুঁকির মধ্যে চলতে হচ্ছে।

প্রাপ্ত এক তথ্যে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে আর্সেনিকের শিকার হয়ে তালা উপজেলায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন একই পরিবারের চারজন। এই পরিবারটি উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামের।  এই পরিবারের জালাল মোড়লও আর্সেনিকে আক্রান্ত।  তার শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। এইজন্য তাকে কেমো থেরাপি নিতে হচ্ছে।

জালাল মোড়ল জানালেন, তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও আর্সেনিকে আক্রান্ত। তার পরিবারের সদস্য ফুফু শরভানু বিবি, পিতা আনসার মোড়ল, বড় ভাই আলাউদ্দীন মোড়ল, ভাই সালাউদ্দীন মোড়ল আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ আর্সেনিকে ভুগছেন বলে জানান তিনি।

পাশের পরিবারের সদস্য সাজেদা বেগম জানান, তিনি নিজেও আর্সেনিকে আক্রান্ত। তার বিয়ের পর তার স্বামীর পরিবার যখন জানতে পারে সে আর্সেনিক আক্রান্ত তখন তাকে বাপের বাড়ীতে রেখে যায়। তিনি আরও জানান,আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে এখানে মারা গেছেন- আলাউদ্দিন, সালউদ্দিন, মুনছুর রহমান মোড়ল, শাহানারা বেগম, শরুপজান বিবি, সোনাবান বিবি, সোহরাব মোড়ল, ইয়াছিন মোড়ল, সরবানু বিবি, ছবেদ মোড়ল, ফকির মোড়ল ও জবেদ আলী মোড়লসহ বেশ কয়েকজন।

তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় টিউবওয়েলের পানিতে রয়েছে আর্সেনিকের অস্তিত্ব। ফলে পান ও ব্যবহারযোগ্য পানি সংকটে পড়েছে এ উপজেলার বাসিন্দারা।

জনস্বাস্থ্য বিভাগ দীর্ঘদিন টিউবওয়েলে পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় ঝুঁকি  নিয়েই আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও  ব্যবহার করছেন এখানকার মানুষ।

জানা গেছে, আলোচিত এমন ঘটনায়ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পরিদর্শনে যাননি। মাঝে-মধ্যে এনজিও কর্মীরা এলাকা পরিদর্শন ও জরিপ করলেও কোন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেনি। এই উপজেলায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তালা সদর, খেশরা, খলিশখালী ও জালালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

এ ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা খুবই হতাশ। তবে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন এই অঞ্চলের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে পুকুর খনন করে সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে।

তালার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম,মফিদুল হক লিটু জানান, আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি হলেও তার পরিষদ থেকে এজন্য কিছুই করতে পারেননি। তবে টিউবওয়েলগুলোতে পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন।

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক রাজীব সরদার জানান, এখানে অনেকের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি আর্সেনিক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। তবে আর্সেনিক একবার কোন মানুষের শরীরে ঠাঁই নিলে ধীরে ধীরে সারা শরীরে চকচক দাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভাল হওয়ার লক্ষণ খুবই কম থাকে।





রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২৯ অক্টোবর ২০১৮/শাহীন গোলদার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়