ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সারা বছর এমন স্রোতস্বিনী থাক গড়াই

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সারা বছর এমন স্রোতস্বিনী থাক গড়াই

মাগুরা প্রতিনিধি : গড়াই নদী। বর্ষায় ভেসে প্লাবিত হচ্ছে ফসলী জমি। শুষ্ক মৌসুমে মরুভূমির মতো ধু ধু বালু চর। পদ্মার প্রধান শাখা গড়াইয়ে দুই মৌসুমে এই বিপরীত রূপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক, জেলেসহ নদীপাড়ের হাজার, হাজার মানুষ।

শুধু জীবন জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব নয়, বছরের অধিকাংশ সময় নদীর বুক জুড়ে বালু চর পড়ে থাকায় ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। যে কারণে এলাকাবাসীর দাবি শ্রীপুরের রাজধরপুর থেকে দোরণনগর-লাঙ্গলবাধ হয়ে কুষ্টিয়া পর্যন্ত ডেজিং করে অথবা পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট চ্যানেল থেকে বালু কেটে সারা বছর বাঁচিয়ে রাখা হোক জেলার প্রধান এই নদীকে।

দোরণনগর গ্রামের মৃদুল কান্তি ঠাকুর জানান, শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৮ মাস গড়াইয়ের বুক জুড়ে মরুভূমির মতো ধু ধু বালু চরের সৃষ্টি হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে প্লাবিত হয়ে ফসলী জমি তলিয়ে যায়। চলতি বর্ষায় নদী সংলগ্ন এলাকার বিঘার পর বিঘা ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে শত শত কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বর্তমানে তার নিজের এক বিঘা জমির ফসল পানিতে নষ্ট হচ্ছে। নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হওয়ায় আরো জমিতে তিনি চাষাবাদ করতে পারছেন না।

 



মৃদুল ঠাকুর জানান, শুধু কৃষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, এক সময় শ্রীপুরের রাজধরপুর থেকে দোরারনগর, আমলসার, লাঙ্গলবাধ এলাকার নদী তীরবর্তী কমপক্ষে ২০ গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।  কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে বছরের কমপক্ষে ৮ মাস নদীর বুক জুড়ে মরুভূমির মতো ধু ধু বালু চরের সৃষ্টি হওয়ায় সেই সকল জেলেরা এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

দোরণনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুভা বিশ্বাস জানান, তারা দীর্ঘ দিন ধরে গড়াই নদী ড্রেজিং করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আবেদন-নিবেদন করে আসছেন। তিনি বলেন, এক সময় দোরণনগর, বিষ্ণুপুর এলাকায় ইজারাদার দিয়ে নির্দিষ্ট চর কেটে বালু অপসারণ করা হতো। এতে করে শুষ্ক মৌসুমে অন্তত তাদের এলাকার নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকতো। এতে শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা যেমন নদীর পানি সেচ হিসেবে ব্যবহার করে জমির ফসল ফলাতে পারতেন, অন্যদিকে জেলেরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গত দুই বছর ধরে বালুর চর কাটাও বন্ধ রয়েছে।

দোরণনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, গড়াই নদীর পলি অপসারণ জরুরি। বর্ষা মৌসুমে অল্প সময়ের জন্য প্লাবিত হলেও বছরের অধিকাংশ সময় পলি পড়ে নদীর বুক জুড়ে বালু চরের সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ সময় নদী পানি শূন্য থাকায় জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন বেকার হয়ে পড়েছেন,  অন্যদিকে নদী ঘিরে সৃষ্ট জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ায় প্রকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

 



মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ গড়াই নদীর পলি পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নদী বাঁচাতে ড্রেজিং বা নির্দিষ্ট চ্যানেল থেকে বালু অপসারণ প্রয়োজন। এতে করে ভাঙন রক্ষা ও নদী বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।



রাইজিংবিডি/মাগুরা/২৪ আগস্ট ২০১৭/মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়