ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সালার ডি ইউনি: বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক আয়না

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৫ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সালার ডি ইউনি: বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক আয়না

মাহমুদুল হাসান আসিফ : আপনি যখন পৃথিবীর সুন্দরতম স্থানগুলোর কথা ভাবেন, তখন নিশ্চয়ই পাহার-পর্বত বা বনভূমির কথা মাথায় আসে। কিন্তু একবার ভাবুন তো, বিশাল এলাকাজুড়ে লবণে ঠাঁসা কোনো সমভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আপনি সেটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেমন হতো ব্যাপারটা? ভাবতে অবাক লাগলেও পৃথিবীতে এমন স্থান আছে।

সালার ডি ইউনি হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ লবণ সমভূমি এবং দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম চমকপ্রদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে প্রবেশের শুরুতেই রয়েছে একটি প্রাচীন রেল কবরস্থান, একটি লবণের তৈরি হোটেল এবং আপনার কাছে থাকা সকল ডিভাইস চার্জ করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ লিথিয়াম। তাছাড়া আপনি চাইলে আপনার জীবনের সমস্ত কাহিনি এই লবণভূমিতে লিখে রাখতে পারেন।

বিস্ময়কর এক আয়নাভূমি
সালার ডি ইউনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,০০০ ফুট উচ্চতায় বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে চিলির সীমান্তের সঙ্গে অবস্থিত। এই লবণভূমিটি হাজার বছরের প্রাগৈতিহাসিক হ্রদগুলোর বিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি ১০,৫৮৩ বর্গ কি.মি এলাকাজুড়ে অবস্থিত। বর্ষার সময় আশেপাশের হ্রদগুলো থেকে পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে এই লবণভূমিটি প্লাবিত হয় এবং সেখানে ২০ ইঞ্চির মতো গভীর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানির এই পাতলা আস্তরণের কারণে সেখানে আকাশের চমকপ্রদ এক প্রতিবিম্ব তৈরি হয়।

ভূমিটি ভেজা থাক অথবা শুষ্ক, প্রতিনিয়ত প্রচুর ফটোগ্রাফারের ভিড় জমে। সালার ডি ইউনির অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে ফটোগ্রাফাররা ছবি তোলার এক অমোঘ নেশায় মেতে ওঠেন। আপনি যদি দক্ষ ফটোগ্রাফার নাও হন কোনো সমস্যা নেই। এখানে যেমন খুশি ছবি তুলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি তা আপলোড করতে পারবেন।


লবণ এবং ব্যাটারির প্রাচুর্যে ভর্তি ইউনি
সালার ডি ইউনি শুধু পর্যটকদের লীলাভূমিই নয়। আমেরিকার ভূগোলবিষয়ক জরিপ অনুযায়ী এখানে ৯ মিলিয়ন টন লিথিয়াম ধাতু রয়েছে। তাছাড়া সমগ্র পৃথিবীর মোট লিথিয়াম ধাতুর ৫০-৭০ শতাংশ মজুদ এখানে রয়েছে। ইউরোপীয় মহাকাশ অধিদপ্তরের এক জরিপ অনুযায়ী সালার ডি ইউনির বিশাল এলাকা, পরিষ্কার আকাশ এবং ভূমি অত্যন্ত সমতল হওয়ার কারণে তা মহাকাশ থেকে স্যাটালাইটের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা মাপার জন্য খুবই উপযোগী। তাছাড়া এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মহাকাশের মতো অপরূপ স্থান থেকেও অসাধারণ দেখায়।

সালার ডি ইউনিতে শুষ্ক মৌসুম, রাত্রিকালীন শীতল আবহাওয়া, তীব্র মরুভূমির মতো সূর্যতাপ থাকা সত্ত্বেও এখানে জীবনের স্থায়ীত্ব অনেক বেশি। এখানে অমোঘ সৌন্দর্যের অধিকারী গোলাপী রাজহাঁস এবং বিরল প্রজাতির হামিং বার্ড রয়েছে। তবে এখানে বিষাদের প্রতীক হিসেবে রয়েছে একটি রেল কবরস্থান। সালার ডি ইউই একসময় ট্রেনে করে লবণ পরিবহনের জন্য বিখ্যাত ছিল এবং খনি কর্মীরা সমতল এই ভূমি থেকে প্রচুর লবণ সরবরাহ করতো। কিন্তু এই এলাকার আদিবাসীদের আক্রমণের কারণে ট্রেনে করে এই লবণ সরবরাহের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এখানে আপনার জন্য কিছু অবাককর বিষয় অপেক্ষা করছে যা এখানে না আসলে আপনার পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। এখানে মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে সমতল ভূমির ওপর দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভ্রমণ করা যায়, যা বর্ষার সময় সম্ভব নয়। আপনি যদি এখানে প্রাকৃতিক আয়নার বিভিন্ন অলিক খেলা উপভোগ করতে চান তাহলে বর্ষা মৌসুমে আসুন। শুষ্ক মৌসুমে এটি থাকে ধবধবে শুভ্র, কিন্তু বর্ষায় পুরু লবণের এলাকাটি একটা বিশাল আয়নায় পরিণত হয়। কয়েক ইঞ্চি গভীর হয়ে জমে থাকা এই স্বচ্ছ পানিতে ফুটে ওঠে প্রকৃতির সব রূপ, রং। তবে বর্ষার দুর্গম আবহাওয়ার ফলে এখানকার যাত্রা প্রায়শই বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেশ দীর্ঘ সময় ধরে যাতায়াত বন্ধ থাকে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়