ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাহরি ও ইফতারে অতিভোজন কি ঠিক?

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ৩১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাহরি ও ইফতারে অতিভোজন কি ঠিক?

ডা. সজল আশফাক: ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সাহরি ও ইফতারে যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকি সেগুলোর সবই যে যথাযথ তা নয়। এই সব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার কিছু খাবার স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা পুষ্টিকর হলেও সময়োচিত নয়। রোজার সময় খাবারের বিভিন্ন দিক নিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, রোজার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোজাদাররা অসুস্থ হয়ে পড়েন যথাযথ খাবার গ্রহণ না করার কারণে। বিশেষ করে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের কারণেই অসুস্থতা দেখা দিয়ে থাকে। এর সাথে অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরটাকে কিছুটা বিপাকে ফেলে দেয়।

রোজায় এই শারীরিক বিপত্তি এড়ানো খুবই সহজ বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সারাদিন রোজা রাখার পর সারাদিনের খাবার একসঙ্গে খেতে হবে এমন মানসিকতা থেকেই এই বিপত্তি। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞের কথা হচ্ছে, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে পাকস্থলির একটা নির্দিষ্ট আয়তন ও খাবার ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। শুধু একদিন কেন, তিনদিন না খেয়ে থাকার পরও পাকস্থলি তার ধারণ ক্ষমতার বেশি খাবার গ্রহণ করতে পারবে না। সুতরাং বেশি খেলে বিপত্তি ঘটবেই। তাই এ ধরণের বিপত্তি এড়াতে গবেষকদের প্রথম উপদেশ হচ্ছে সাহরি ও ইফতারে অতিভোজন পরিহার করা। দ্বিতীয়ত শরীর নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে রোজার সময় বিপাক ক্রিয়ার হার কমিয়ে দেয় এবং শরীরে জমাকৃতচর্বি ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় খাবারের ব্যাপারে অধিকাংশ লোকজনই রুচিকর খাবার গ্রহণের দিকে বেশি মনোযোগী থাকে কিন্তু সুষম খাবার বা ব্যালান্স ডায়েটের কথা মনে রাখেন না। রোজায় সুস্থ থাকার জন্য সব ধরণের খাবার মিলিয়ে খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে আটা বা চাল, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার, মাছ, মাংস এবং ডিম, শস্যদানা, শাকসবজি এবং সর্বোপরি ফল জাতীয় খাবার রাখা উচিত।

সাহরি এবং ইফতার উভয়ের পরই ফল খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে  উপদেশ দেয়া হয়েছে এই গবেষণায়। সাহরির পর কলা খাওয়া যেতে পারে। কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট। তবে কলা কারো কারো ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য করে থাকে। সেক্ষেত্রে আশঁজাতীয় খাবার খেলে আর কোনো সমস্যা দেখা দেয়ার কথা নয়। রোজায় সুষম খাবার পরিমাণ মতো গ্রহণ করলেই শরীর সুস্থ থাকবে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। সুষম খাবার খেয়ে রোজা রেখে ইফতারের আগে হাত-পা সঞ্চালন জাতীয় হালকা ব্যায়াম এবং নামাজ আদায় করলেই অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা রোজা থেকে ওজন কমানোর সুযোগ পাবেন বলেও উল্লেখ রয়েছে এই নিবন্ধে।

গবেষকরা বলেছেন রোজার খাবার যত সাধারণ হবে তত ভালো। রোজা হচ্ছে বাড়তি ওজনসম্পন্ন লোকদের জন্য ওজন কমানোর উপায়। কিন্তু অতিভোজনের কারণে সে উদ্দেশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

রোজায় দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতে হয় বলে সাহরিতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বা জটিল শর্করা গ্রহণ করা উচিত। এই জটিল শর্করা ধীর গতিতে হজম হয় এবং হজম হতে প্রায় ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে দিনের বেলা ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। জটিল শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে শস্যদানা বা বীজ জাতীয় খাবার, অপরিশোধিত আটা, ময়দা এবং ঢেঁকিছাটা চাল। অন্যদিকে পরিশোধিত শর্করা দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং রক্তে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে শরীর চাঙ্গা করে। এ ধরনের খাবার হজমে সময় নেয় ৩-৪ ঘণ্টা। তাই এসব খাবার ইফতারে গ্রহণ করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’ জার্নালে।

দ্রুত হজম হয় এমন শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে রিফাইনড্ ময়দা ও চিনি জাতীয় খাবার। খেজুর হতে পারে ইফতারের একটি অন্যতম খাবার। খেজুর হচ্ছে চিনি, তন্তু বা ফাইবার, শর্করা, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের উৎস। ইফতারে ২-৩টা খেজুরই শরীরকে দ্রুত চাঙ্গা করে দিতে পারে তবে সাথে পানি পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
 

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল






রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মে ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়