ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৫ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি তীব্র গতিতে বাড়ছে।

যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের ড্যাটা অ্যান্টি অপারেটর আবুল কালাম আজাদ জানান, সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের পর এবারই প্রথম যমুনার পানি বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরো বাড়বে বলে সিরাজগঞ্জ পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন।

পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ৪০ হাজার পরিবারের আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা কবলিত অনেকেই ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। দুই হাজার হেক্টর ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসন থেকে ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা বিতরণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা বন্যা কবলিতদের হাতে পৌঁছেনি।

 



সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনজিৎ কুমার সরকার জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার যমুনার পানি বৃদ্ধির তীব্রতা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০১৬ সালের বন্যায় সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি সর্বোচ্চ ১৪.২৪ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছিল। আর এ বছর জুলাই মাসের প্রথম বন্যায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে সর্বোচ্চ ১৪.১৪ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়। যেটা ছিল বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপরে। অথচ চলতি মাসে দ্বিতীয় দফার বন্যায় চারদিনের মধ্যেই ১২৬ সেন্টিমিটার ওপরে এবং গত বন্যার চেয়ে ৪৭ সেন্টিমিটার বেশি। এসব কারণে এবার জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুভগাছা ইউনিয়নের টুটুলের মোড় এলাকার বাসিন্দা শীলা খাতুন, আফজাল হোসেন, সকিতন ভেওয়া ও আব্দুল কুদ্দুস জানান, তাদের বসতবাড়ি একেবারে তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলা পানি। কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারেননি। কয়েকটি টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো জায়গা নেই। তাই ওয়াপদার ধারে পলিথিন টাঙিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন। বৃষ্টির কারণে সময়মতো রান্নাও করতে পারছেন না। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজলায় প্রায় দুই শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে জরিপ চলছে।

ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৭০ মেট্টিক টন চাল ও সাড়ে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

 



পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, আরো দুয়েকদিন পানি বাড়তে পারে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। কোনো অবস্থাতেই যেন বাঁধ এলাকায় কোনো ধস বা ভাঙন সৃষ্টির পরিস্থিতি না হয় সে জন্য পাউবোকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। তারপরেও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব প্রকার প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ১৬৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য শুকনো খাবার, মোমবাতি, দেয়াশলাই প্যাকেট ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/সিরাজগঞ্জ/১৫ আগস্ট ২০১৭/অদিত্য রাসেল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ