সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ অন্তর্ধানের ৪৭ বছর
শাহ মতিন টিপু : 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' এই অমর গানটির সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদের অন্তর্ধানের ৪৭তম বার্ষিকী আজ। এই শোকের মাসেই তার মতো মহা গুণীজনকে হারিয়েছিল এই দেশ।
পাকিস্তানি হানাদাররা ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট আলতাফ মাহমুদকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর আর সন্ধান মেলেনি গণসঙ্গীতের এই সুরস্রষ্টার।
তবে ধরে নেওয়া হয় তিনি শহীদ হয়েছেন। মহান স্বাধীনতার যুদ্ধসময়ে দেশ যেসব প্রতিভাবানদের হারিয়েছে তিনি তাদের অন্যতম একজন। মুক্তিযুদ্ধে তার গানে তার সুরে উজ্জীবিত হয়েছে এ দেশের দেশপ্রেমিক সন্তান। আজো মহান একুশে তার সুরের রেশেই পূর্ণতায় সমাপ্ত হয়।
ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উল্টো দিকে আউটার সার্কুলার রোডের বাসায় থাকতেন এই গণসঙ্গীত শিল্পী ও সুরকার। শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, একজন বন্দীর বক্তব্য- আলতাফ মাহমুদকে বন্দী অবস্থায় প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয় এবং ৩ সেপ্টেম্বর চোখ বেঁধে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোথায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা বলতে পারেননি ওই বন্দী। পরিবারের সদস্যরাও কেউ তাঁর খোঁজ পাননি।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন- এদেশ সৃষ্টির দু’টো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গেই মিশে আছেন তিনি। বলা হয়, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এ গানের কথা ও সুরের মধ্যেও রোপিত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। যা মানুষের ভেতরে এ অন্যরকম স্পন্দন তৈরি করেছে। আর আজো করছে।
একদিকে সঙ্গীতের ঝংকার, অন্যদিকে ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা শহরের গেরিলা অপারেশনে সক্রিয় অংশ নেন। ক্র্যাক প্লাটুনেরও একজন সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন তিনি । স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠান তৈরি করে গোপনে তা মুক্তাঞ্চলেও পাঠাতেন।
শহীদ আলতাফ মাহমুদের জন্ম বরিশাল জেলার মুলাদীতে পাতারচর গ্রামে। ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নাজেম আলী হাওলাদার এবং মা কদবানুর একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন তিনি ।
গ্রাম থেকে আসা সেই ছেলেটি ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে গেছেন, বাঙালী জাতি তাকে আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
তিনি এ সময়ে গণসঙ্গীত ছাড়াও নৃত্যনাট্য রাজপথ জনপথ, জ্বলছে আগুন ক্ষেতখামারে, হাজার তারের বীণার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। আলতাফ মাহমুদ ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত উর্দু ও বাংলা মিলে বহু চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
আজ অমর সুরস্রষ্টার স্মরণে সন্ধ্যা ছয়টায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও ফেরদৌসী মজুমদারকে শহীদ আলতাফ মাহমুদ নামাঙ্কিত পদক দেওয়া হবে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ও শহীদ কন্যা শাওন মাহমুদ।শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক ও স্মরণ অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আজ অন্তর্ধান দিবসে মহান সুরস্রষ্টাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ আগস্ট ২০১৮/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন