সেই ২২ মার্চ, আজকের ২২ মার্চ!
ক্রীড়া প্রতিবেদক, কলম্বো থেকে : ২০১২ সালের ২২ মার্চ। পুরো মাঠ টইটুম্বুর। মিরপুর শের-ই-বাংলার গ্যালারি একটুও ফাঁকা নেই। তিল ধারণের জায়গা নেই। পুরো শহরজুড়ে উৎসব। অফিস-আলাদত দুপুরের পর বন্ধ। বাংলাদেশ সেদিন খেলছিল এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ম্যাচের ফলাফল কি হয়েছিল তা তো সবারই জানা। সেদিনের ২ রানের আক্ষেপ এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
আজ ২২ মার্চ ২০১৭। এশিয়ার আরেক পরাশক্তি শ্রীলঙ্কার দল শ্রীলঙ্কা বোর্ড সভাপতি একাদশের মুখোমুখি বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলেও প্রস্তুতি ম্যাচে আন্তর্জাতিক ম্যাচের আবহ। আজও বাংলাদেশ হারল ২ রানে! পাক্কা ৫ বছর আগে ফিরে গেল লাল-সবুজ জার্সীধারীরা।
মিরপুর শের-ই-বাংলার পরিবর্তে আজকের মাঠ কলম্বো ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ম্যাচের চিত্রনাট্য পাল্টালেও চরিত্রগুলো কেমন যেন মিলে গেল হুবহু। ১ বলে ৩ রানের বিপরীতে, আইজাজ চিমার করা সেদিনের শেষ বল খেলেছিলেন শাহাদাত হোসেন। ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অপরপ্রান্তে। আজ ১ বলে ৪ রানের প্রয়োজনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ক্রিজে। কিন্তু থিসারা পেরেরার বল স্কয়ার লেগ ও লং অনের মাঝে পাঠিয়ে ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। সেদিন মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ১৭ রানে। আজ সংখ্যাগুলো পাল্টে গিয়ে দাঁড়াল ৭১ এ।
‘কুফা’ বাংলাদেশ দলে লেগেছিল সেদিনই। সেই ‘কুফা’ আজও লেগে আছে টাইগারদের লেজ ধরে। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। বোলিং, ব্যাটিংয়ে অসাধারণ বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ ওভারের খেলায় ১ রানে হারল বাংলাদেশ। আবারও সেই মার্চ, আবারও হারল বাংলাদেশ।
কলম্বো ক্রিকেট গ্রাউন্ড ছাড়ার সময় মাশরাফি এক কথায় বললেন,‘‘কুফা’’ তো ছাড়াতে পারলাম না। এরকম কত ম্যাচ হারলাম্।’ চোখে-মুখে স্পষ্ট এ ম্যাচে জয় পাওয়ার তাড়ণা কতটুকু বেশি ছিল মাশরাফির দলের। কিন্তু শেষ দিকে লড়াই ভাগ্যবিধাতাকে পাশে পেল না বাংলাদেশ।
৩৫৫ রানের লড়াইয়ে নেমে বাংলাদেশ শুরুতে উইকেট হারায়। এরপর সৌম্যর ৪৭, সাব্বিরের ৭২ ও মোসাদ্দেকের ৫৩ রানে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। অষ্টম উইকেটে স্বরূপে ফিরে আসে টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মাশরাফি ৯.৪ ওভারে ১০১ রানের জুটি গড়েন। ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন মাশরাফি। ৩৫ বলে করেন ৫৮ রান। ৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কন্ঠে ওই ২ রানের আক্ষেপ!
‘‘দলকে তো জেতাতে পারলাম না। ওই সময়ে আসলে দরকার ছিল রিয়াদকে স্ট্রাইক দেওয়া। ওরা স্লোয়ার দিচ্ছিল। রিয়াদ তো ব্যাটসম্যান, আমার চেয়ে অনেক ভালো মারতে পারতো। কুফা তাড়ানোর দরকার ছিল। এরকম কুফা লেগে আছে। ১-২ রানে কম ম্যাচ হারিনি। সাড়ে তিনশ’রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারলে খুব ভালো হতো। এই ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য এই জয়টা খুব দরকার ছিল।’’
মাশরাফির কন্ঠে আপেক্ষের সুর বলে দেয় ২০১২ সালের ২২ মার্চের হার এখনও তরতাজা তার মনে। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চের ১ রানের হার এখনও ভুলেননি তিনি। কোনোদিনও ভুলবেন না। অপ্রাপ্তির খাতায় রাবণের দেশে ২ রানের এ হার নতুন করে আক্ষেপ তৈরী করছে টাইগার অধিনায়কের মনে।
রাইজিংবিডি/ কলম্বো (শ্রীলঙ্কা)/২২ মার্চ ২০১৭/ইয়াসিন/শামীম
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন