ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘সৌদির সঙ্গে সামরিক চুক্তি সংসদকে পাশ কাটিয়ে কেন’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সৌদির সঙ্গে সামরিক চুক্তি সংসদকে পাশ কাটিয়ে কেন’

সংসদ প্রতিবেদক : সংসদকে পাশ কাটিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। এমন চুক্তি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, সে ব্যাপারে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ইতোমধ্যে বিবিসিতে সংবাদ দিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশ একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করে নাই। ওই সমঝোতা চুক্তির আওতায় ইয়েমেন সীমান্তে বাংলাদেশের ১ হাজার ৮০০ সেনা নিয়োগ দেওয়ার কথা।

তিনি বলেন, সৌদি আরবের ইসলামিক মিলিটারি কাউন্টার টেরোরিজম কোয়ালিশনে (আইএমসিটিসি) বাংলাদেশ থেকে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ চার কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য নামও দেওয়া হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। ২০১৫ সালে যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগে বাংলাদেশ নাম লিখেছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম, আমাদের জন্য কতটা ইতিবাচক হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ জরুরি। খটকা ছিল তখনই। সেই সময় সৌদি আরব যেটাকে ৩৪ জাতি সামরিক জোন বলেছিল, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনিয়ে-বিনিয়ে তখন বলেছিল, এটা একটি সন্ত্রাসবিরোধী সমন্বিত উদ্যোগ। সেই সময় জনগণের আশঙ্কা নিরসন করে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, সৌদি আরবে যে দুটি পবিত্র মসজিদ রয়েছে মক্কা এবং মদিনায় হারেম শরিফ- এই মসজিদ দুটি যদি আক্রমণের মুখে পড়ে তখনই কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাঠাবে। এর বাইরে কখনো কোনো সেনাবাহিনী পাঠাবে না।

রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, আমরা জেনেছি, এই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন পর্যায়ে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের সংবিধানের ২৫ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, সেটা অবশ্যই পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সংবিধানের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এই দুই দিক দিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সংসদ সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু এই সংসদ চলমান থাকা অবস্থায় বিদেশে একটি সামরিক চুক্তি হচ্ছে অথচ সংসদে কোনো আলোচনা হয়নি। পার্লামেন্টকে মূল্যহীন করে এটা এভাবে করা কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার। রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ হচ্ছে পার্লামেন্ট, এই পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার।

তিনি বলেন, আজ যদি সংসদ চলমান না থাকত তাহলে একটা কথা ছিল। সংসদ চলমান আছে, অথচ সংসদকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এটা প্রত্যাশিত নয়। দেশের সকল চুক্তির বিষয় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদকে অবহিত করার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত টিকফা চুক্তি, ২৫ বছরের চুক্তিসহ কোনো চুক্তি সংসদে জমা পড়েছে কি না, আমার জানা নেই।

স্পিকারের উদ্দেশে করে এই সংসদ সদস্য বলেন, আপনার দপ্তরে জমা পড়েছে কি না, জানি না।

সংবিধানে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ, এ কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে।

বৈদেশিক চুক্তিতে সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্র যুক্ত থাকে, উল্লেখ করে সংবিধানে থাকা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা তুলে ধরেন এ সংসদ সদস্য। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘রাষ্ট্র’ এর সংজ্ঞায় বলায় হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বলিতে, সংসদ, সরকার ও সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ অন্তুর্ভূক্ত’। সংবিধানের ১৪৫ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, জাতীয় নিরাপত্তার সহিত সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হইবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আসাদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়