ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্কুল থেকে কলেজে (শেষ পর্ব)

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুল থেকে কলেজে (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : এ যেন শৈশব আর কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে উত্তরণ। মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ডানা মেলার প্রথম ধাপ। স্কুলজীবন পেরিয়ে কলেজজীবনে প্রবেশ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। এতদিনের নিয়মে বাঁধা রুটিন ছেড়ে একটুখানি বেরিয়ে আসার অবকাশ। আর তাতে সবাই রোমাঞ্চিত হবে না, তা কি আর হয়!

আসলে স্কুলে পড়াকালীন ‘কলেজ’ শব্দটি প্রায় সকলের কাছেই এক রঙিন ক্যানভাসের মতো। কলেজে পড়তে যাওয়া মানেই তো চোখে একরাশ স্বপ্ন, ভবিষ্যতকে নতুনভাবে দেখার ইচ্ছা। যেন ‘আমি বড় হয়ে গেছি’ এমন অনুভূতি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে ব্যাপ্ত করারও সময় এটা। এই সময়টার উপযুক্ত ব্যবহার করার দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীদের। রইল কিছু পরামর্শ।

* প্রথম দিন
কলেজের প্রথম দিনটি সবার কাছেই স্মরণীয় একটি দিন। এতদিন ধরে ভাইয়া বা আপুদের কাছে কলেজজীবনের যেসব রোমাঞ্চকর গল্প শুনেছেন, সেগুলো এখন বাস্তবায়িত হওয়ার অপেক্ষা। তবে প্রথমেই একটি বিষয় মনে গেঁথে নেওয়া প্রয়োজন। তা হল কলেজ মানেই তথাকথিত লাগামছাড়া স্বাধীনতা- এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অনেকেই ধরে নেন, কলেজ মানেই বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখা- এমন স্বাধীন জীবনযাপন। কলেজ সম্পর্কে এত রঙিন চিন্তাভাবনা না রাখাই ভালো। এতদিনের স্কুল জীবনের কড়া অনুশাসন না থাকলেও পড়াশোনাকে অবহেলা করার কোনও সুযোগ এখানে নেই। চূড়ান্ত পরীক্ষার আগেও কলেজের ক্লাসে বিভিন্ন পরীক্ষা হয়ে থাকে। দিনের পর দিন ক্লাস ফাঁকি দিলে বা পড়াশোনায় অবহেলা করলে এসব পরীক্ষার ফলেই তার প্রমাণ মিলবে। তাই প্রথম থেকেই ভেবে নেওয়া ভালো যে, কলেজজীবন যেমন উপভোগের, তেমনই ভবিষ্যতের ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে তোলারও এটাই সময়। প্রথম দিন কলেজে ঢুকে সিনিয়রদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন। পরবর্তীকালে পড়াশোনা বা অন্য কোনও সাহায্যে এরাই কাজে আসবেন। শিক্ষকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

* কো-এড কলেজ
ছোটবেলা থেকে যারা বয়েজ বা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, তাদের মধ্যে কো-এড কলেজে পড়া নিয়ে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অনেকে এই নতুন অভিজ্ঞতার কথা ভেবে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আবার অনেকের নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে অস্বস্তি হয়। প্রাথমিকভাবে অনেকে বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুর সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে লজ্জা পান। ক্লাস নোটস নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন। এমন লিঙ্গের পার্থক্যের কথা মাথায় রাখলে মুশকিলে পড়বেন। কো-এড কলেজে পড়ার সুবিধা অনেক। বয়েজ বা গার্লস স্কুলে এতদিন যে কড়া নিয়মের মধ্যে বড় হয়েছেন, এখানে তা অনেকটাই থিতিয়ে যাবে। চিন্তাভাবনার দিক থেকেও অনেক উদার হতে পারবেন। তবে অনেকেই এই নতুন পরিস্থিতিতে বিপরীত লিঙ্গের কারো প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু কোনটা প্রেম আর কোনটা নিছক দুর্বলতা তা মাথায় রাখতে হবে। এই বয়সে প্রেম হওয়া যেমন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, তেমনই প্রেমে আঘাত পেলেও এই বয়সের ছেলেমেয়েদের কষ্ট হয় অনেকগুণ বেশি। প্রেম বা প্রেম ভাঙ্গার চক্করে পড়লে আখেরে কিন্তু আপনারই ক্ষতি হবে। তাই হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না।

* র‌্যাগিং, রাজনীতি
নতুন ছেলেমেয়ে কলেজে ঢুকলে টুকটাক উত্যক্ত করে থাকেন সিনিয়ররা। এটা এক এক কলেজে এক এক রকম হতে পারে। তবে বেশিরভাগ কলেজেই সিনিয়র এবং জুনিয়রদের পরিচয়পর্ব মোটেই ক্ষতিকারক নয়। সিনিয়ররা হয়তো নানারকম প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু এগুলো খুব সাধারণ ব্যাপার, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কলেজের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেই এ জাতীয় সমস্যা আর থাকবে না। বেশিরভাগ কলেজেই রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকে ভালোমতোই। কলেজে ভর্তি হয়েই রাজনীতিতে জড়িয়ে না পড়া ভালো। বরং প্রথম বছরটা শেষ করে তারপর ভেবে দেখতে পারেন।

* গ্রাম থেকে শহরে
গ্রাম থেকে শহরে পড়তে গেলে অনেকের মধ্যেই বেশ দুশ্চিন্তা কাজ করে। নতুন পরিবেশে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, নতুন বন্ধুরা আপনার সঙ্গে মিশবে কি না ইতাদি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। কেউ কেউ ভোগেন হীনমন্যতায়। কোনও কারণ ছাড়াই মনে হতে থাকে কলেজের বাকিরা তাকে বোধহয় হেনস্থা করবেন। তিনি হবেন তাদের হাসির খোরাক। অনেকেই আবার চটজলদি আধুনিক হওয়ার তাড়নায় ভুল পথে চালিত হন। ধূমপান, মদ্যপান বা একাধিক প্রেমের সম্পর্ক তৈরি তাদের কাছে হয়ে ওঠে আধুনিকতার লক্ষণ। এসব ভুল পথে চালিত হবেন না। নিজেকে অন্যদের তুলনায় ছোট ভাববেন না। আপনি যত বড় শহরের যত অত্যাধুনিক কলেজেই ভর্তি হন না কেন, আপনার আশেপাশে যতই আধুনিকমনস্ক ছেলেমেয়েরা ঘুরে বেড়াক না কেন, আপনি কলেজে ভর্তি হয়েছেন নিজের যোগ্যতায়। আর এখানে টিকে থাকতে হলে ভরসা রাখতে হবে সেই যোগ্যতার উপর। হীনমন্যতায় না ভুগে যদি নিজের প্রতি পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে সেটাই হবে আপনার হাতিয়ার। বাকিদের কথায় বা কাজে প্রভাবিত হবেন না। নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকুন। সাফল্য এলে সবাই এমনিতেই বুঝে যাবে আপনার পরিচয়।

পড়ুন :

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়