ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্ত্রীকে ভয়াবহ নির্যাতন, স্বামী আটক

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্ত্রীকে ভয়াবহ নির্যাতন, স্বামী আটক

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে মা ও নির্যাতিত মেয়ে

কালীগঞ্জ সংবাদদাতা : গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্ত্রীর (৩৬) গোপনাঙ্গে গরম রডের ছ্যাঁকা দেওয়াসহ অমানুষিক নির্যাতন করেছে এক পাষন্ড স্বামী। ঘটনার পর স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আটক স্বামী কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বালীগাঁও গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। সে কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের নাভানা কারখানার পাশে চায়ের দোকানি । আর নির্যাতিতা স্ত্রী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজৈর গ্রামের তৈয়ব আলীর মেয়ে।

জানা যায়, পাষন্ড স্বামীর নাম তমিজ উদ্দিন (৫০)। সে বহু বিবাহেরও নায়ক।নির্যাতিত স্ত্রীর মা জানান, তমিজ সম্পর্কে তার ভাইয়ের ছেলে।প্রায় দেড় যুগ আগে তাদের বিবাহ হয়। তাদের সংসারে তামিম (১৭), শামীম (১৬), রামীম (১৩) ও ইয়ামিম (১১) নামে চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিল তমিজ উদ্দিন। তাই চার বছর আগে স্বামীর সম্মতিতেই লেবাননে নারী শ্রমিকের কাজে যায় মরিয়ম। সেখানে প্রায় দুই বছর অবস্থান করে দেশে ফিরে। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। পরে অবশ্য তা মিটেও যেত। স্ত্রীকে না জানিয়ে সে আরো ৫টি বিয়ে করে। বর্তমানে এই স্ত্রী ছাড়া কেউই তার সাথে নেই ।

তিনি জানান, ঈদের পর গত সোমবার থেকে ঘরের ভিতর আটকে রেখে স্ত্রীকে টানা ৪ দিন নির্যাতন করে তমিজ উদ্দিন। এ সময় কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকেও মারতে আসে। পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হলে বড় ছেলে তামিম গত বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ থানায় পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করে এবং তমিজ উদ্দিনকে আটক করে। মারাত্মক আহত অবস্থায় মেয়েকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

মেয়েকে লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদে কেঁদে মা জানান, তমিজ লোহার রড গরম করে যৌনাঙ্গ ছাড়াও হাতে-পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়। এই সময় তার দুটি স্তনের বোঁটাও কেটে ফেলে এবং সমস্ত শরীর রক্তাক্ত জখম করে।

তিনি জানান, ২০০৯ সালে তমিজ তার চাচা আনোয়ার হোসেনের হত্যা মামলারও এজাহারভূক্ত আসামী। ওই মামলায় সে জেলও খেটেছে। কিন্তু বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে ।

শুক্রবার রাতে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডে তমিজের স্ত্রীকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখা যায়। জানালেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলেও অর্থের অভাবে সেখান থেকে এসে পুনরায় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, তাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

স্ত্রীকে  নির্যাতনের ব্যাপারে পুলিশের কাছে স্বামী তমিজ জানায়, এটা তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত।  

কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান জানান, তিনি বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন ও তমিজ উদ্দিনকে আটক করতে সমর্থ হন। এব্যাপারে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। 

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/কালীগঞ্জ (গাজীপুর)/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রফিক সরকার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়