ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

স্থগিত বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৮ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্থগিত বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক

একাত্তরের মার্চে ৩২ ধানমন্ডিতে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

শাহ মতিন টিপু : ১৮ মার্চ, ১৯৭১। এই দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিন লাগাতার বৈঠকের পর আজ পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে বসেননি। তবে আগামীকাল পুনরায় তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যায়।

অন্যদিকে দিনটি ছিল লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবস। প্রবীণ-নবীন নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২নং বাসভবনে। বাসভবনটি যেন বাংলার মুক্তিকামী মানুষের তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ভোর থেকে গভীর রাত অবধি শত শত মিছিলে লাখ লাখ লোকের উপস্থিতিতে স্লোগানে মুখরিত নেতার বাসভবনের সম্মুখ প্রাঙ্গণ। শপথদৃপ্ত ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, কর্মচারী, শ্রমিক, কৃষক, নার্স, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীদের সংগঠনসমূহ অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ আস্থা জ্ঞাপনপূর্বক নেতার আশীর্বাদ কামনা করেন।

নেতার বাসভবনে সমাগত বিদেশি সাংবাদিকদের এসব মিছিলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেগভরা কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা দেখুন। আমার দেশের মানুষ আজ প্রতিজ্ঞায় কী অটল, সংগ্রাম আর ত্যাগের মন্ত্রে কত উজ্জীবিত। কার সাধ্য এদের রোখে? আমার দেশ আজ জেগেছে, জনগণ আজ জেগেছে। জীবন দিতে শিখেছে। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানের অগ্নিশপথে দৃপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ারকে, প্রচন্ড এ গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে এমন শক্তি মেশিনগানেরও আজ আর নেই। ভোর ৫টা হতে রাত পর্যন্ত আপনারা কেবল একই দৃশ্য দেখতে পাবেন।’

কর্যিত এই দিনে দেশব্যাপী সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছিল। একদিকে সংগ্রামের প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে চলছিল বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের আলোচনা। একপর্যায়ে সবাই বুঝতে পারে যে আলোচনার নামে চলছে সময়ক্ষেপণ। বঙ্গবন্ধু ওই আলোচনাতেই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে আলোচনার নামে প্রহসনের অভিযোগ আনেন। তিনি স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করছিলেন।

একাত্তরের এ দিনেই বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মীরা বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম করতে বিভিন্নস্থানে মতবিনিময় চালিয়ে যেতে থাকে। দেশের বিভিন্নস্থানে সাধারণ মানুষ সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মহিলা পরিষদের মেয়েরাও পিছিয়ে ছিল না। তাদেরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এদিকে পাকিস্তানী বাহিনী সামরিক ঘাঁটি শক্তিশালী করতে গোপনে গোলাবারুদ আর সৈনিক জড়ো করতে শুরু করেছিল। পাকিস্তানী শাসকরা স্বাধীনতার আন্দোলন দমাতে এভাবে একটু একটু করে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও-মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন. ‘এ ধরণের উস্কানি আর সহ্য করা হবে না।’

অন্যদিকে মার্চের উত্তাল গণজাগরণের সপ্তদশ দিবসেও সরকারী-বেসরকারী ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস-আদালত অনুপস্থিত থেকে সর্বশ্রেণির কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচী সফল করে তোলেন।

বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে জনতা সারাদিন মিছিলের পর মিছিল করে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও একাত্মতা ব্যক্ত করে। জনগণের কন্ঠে উচ্চারিত স্লোগান ছিল-‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’

স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি শক্তির প্রতি তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রের দ্বারা বাঙালী হত্যার অপচেষ্টা বন্ধ করার আবেদন জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ অপর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা প্রেরণ করে আসন্ন গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিবৃত্ত করার অনুরোধ জানান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মার্চ ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়