ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্থায়ী রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রের পক্ষে নয় অর্থ মন্ত্রণালয়

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্থায়ী রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রের পক্ষে নয় অর্থ মন্ত্রণালয়

কেএমএ হাসনাত : বাংলাদেশের কোথাও রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে নয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জনমত গড়ে তুলেছেন। কাজেই এ মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী কোন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ এ প্রক্রিয়াকে অন্য দিকে প্রবাহিত করতে পারে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাষান চরে যে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাতে অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নিরুৎসাহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রকল্পটির জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে যে সারসংক্ষেপ তাকে দেওয়া হয়েছিল তাতে তিনি এ ধরনের প্রকল্প রোহিঙ্গাদের জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থার ঈঙ্গিত হবে বলে মনে করছেন। তিনি এক নোটে লিখেছেন, ‘এই উদ্যোগটি এখন বাদ দেওয়া যথাযথ হবে। এই কাজটি এই মৌসুমে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’

সূত্র জানায়, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ভাষান চরে এক লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর বাসস্থান নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি সমন্বিত বৃহৎ প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্প শুরুর আগে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে জরুরি বরাদ্দ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। ওই বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিনি নেতিবাচক অবস্থান নেন।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৫০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠায়। এই ৫০ কোটি টাকা থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। এর প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। এতে অর্থমন্ত্রী এ খাতে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার ব্যাপারে একটি নোট দেন।

এতে বলা হয়েছে, ‘এই উদ্যোগ এখন বাদ দেওয়া যথাযথ হবে। যেখানে আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য তৎপর এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছি তখন ভাষান চরে তাদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কোন ঈঙ্গিতই দেওয়া উচিত নয়। এই কাজটি এই মৌসুমে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুতরাং এজন্য কোন বরাদ্দ আপাতত দেওয়া যাবে না।’

সারসংক্ষেপে বলা হয়, গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উদদেষ্টা ও সামরিক সচিব, নৌবাহিনী প্রধান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ও উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ভাষান চর পরিদর্শন করেন। এতে দেখা যায়, দ্বীপটি সমুদ্র তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় ভরা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে এর অধিকাংশ এলাকা নিমজ্জিত থাকে। ফলে বছরের ৪/৫ মাস (নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত) ওই অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হবে। দ্বীপটি ঘিরে পরিপূর্ণ মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে দ্বীপটিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ বেড়িবাধ নির্মাণ, বাসস্থান সুবিধা, সুপেয় পানি, পয়:ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন, পুকুর খনন, স্কুল, মসজিদ, অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন, সাইক্লোন শেল্টার স্টেশন, দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের সাময়িক বসবাসের জন্য ১৩ হজার একর খাস জমি চিহ্নিত করে বাসযোগ্য করা হয়েছে। এতে একটি হেলিপ্যাড, কিছু টয়লেট, ৪টি শেড ও সীমিত পরিসরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

সারসংক্ষেপে বলা হয়, মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন, কর্মসূচি ও আর্থিক প্ল্যান প্রাক্কলন প্রস্তুত করা সময় সাপেক্ষ এবং এতে বেশ বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। তাই প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে শুরু করার জন্য নভেম্বর মাসে শুষ্ক মৌসুমে নৌবাহিনীর ফরওয়ার্ড বেইজ/নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাথমিক প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরুর জন্য নৌবাহিনীর বাজেট থেকে অথবা অন্য কোন সুবিধাজনক খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়।

অর্থ বিভাগ নৌবাহিনীর নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাথমিক কাজ শুরু করার জন্য অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করে। তবে অর্থমন্ত্রী আপাতত প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে নন। তিনি পরবর্তী কোন মৌসুমে এ কাজ শুরু করার ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়