ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

তানজিনা আফরিন ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ১২ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

রাইজিংবিডি ডেস্ক : জাতির স্বপ্নের ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট এখন মহাকাশে। আর এর মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হলো আরো একটি অর্জন।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মহাকাশ কেন্দ্র স্পেসএক্স থেকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বহনকারী রকেটটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্পেস সোসাইটিতে প্রবেশের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনা হল।

এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃত্রিম উপগ্রহের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও রয়েছে এতে।

বাংলাদেশ এতদিন বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে সম্প্রচার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে আসছিল। এখন এসব কাজ চলবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।


মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্সের সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ে কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করে।
 


ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষকারী আইসিটি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমি আজকের দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে চাই, যিনি ১৯৭৪ সালে দেশের সর্ব প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে মহাকাশ যুগে প্রবেশের কার্যক্রমের সূচনা করেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রযুক্তি কেন্দ্রীক উত্তোরণের দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ, যার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে।

উৎক্ষেপণের দেড় মিনিট পর ফ্যালকন-৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যাওয়ার পর স্টেজ-২ কাজ শুরু করে। এরপর পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে অবতরণ করে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রায় ৩৩ মিনিটের মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে গা ভাসায় বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে স্থাপিত হয়েছে আমাদের স্যাটেলাইট।’

রকেট থেকে উন্মুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু-১ এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে স্থাপিত হবে এই স্যাটেলাইট।
 


তবে অরবিটাল স্লটে স্যাটেলাইটকে বসিয়ে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে প্রায় দুই মাস। তখন গাজীপুরের জয়দেবপুর আর রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে এর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই উৎক্ষেপণের সরাসরি সম্প্রচার প্রত্যক্ষ করার জন্য মধ্যরাতেও জেগে ছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বহু বাংলাদেশি এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সরাসরি সম্প্রচার ও ওয়েবকাস্ট প্রত্যক্ষ করেন।

এর আগে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টা ৪৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তটিও সম্পূর্ণ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ছিল। এ ক্ষেত্রে যেকোনো পরিমাপ অস্বাভাবিক হলে উৎক্ষেপণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এর আগে বলেছেন, ফ্যালকন-৯ মহাকাশ যানে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাবে। দুটি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে ১০ দিন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ দিনের মতো সময় লাগবে। এসব প্রক্রিয়া শেষে গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনে এর সংযোগ পেতে আরো কিছুদিন সময় প্রয়োজন হবে।
 


মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থান করে উপগ্রহটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণে দেশের সক্ষমতা সম্প্রসারিত করবে। উপগ্রহটি থেকে সার্ক দেশগুলোর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং কাজাকিস্তানের একটি অংশ এর সুযোগ নিতে পারবে।

এই স্যাটেলাইট প্রথমে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণের কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইরমার কারণে এর উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাত ও দুর্যোগকালীন উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনা আরো সহজতর করবে।

বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। কোম্পানিটি কয়েক মাস আগে এই স্যাটেলাইট তৈরির কাজ সম্পন্ন করার পর এটি ফ্রান্সের ক্যানেস ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। পরে ২৯ মার্চ এ স্যাটেলাইট ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারস্পুটনিক’ এর কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় (স্লট) কক্ষপথ স্লট ক্রয় করে।

তথ্যসূত্র : বাসস।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মে ২০১৮/ইভা/এনএ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়