ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্বপ্নের পথে পর্বতারোহী শাকিল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১২, ৪ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বপ্নের পথে পর্বতারোহী শাকিল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ‘সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশের তরুণেরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়। স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।’ বলছিলেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী তরুণ ইকরামুল হাসান শাকিল।

পর্বতজয়ী উদ্যমী তরুণ শাকিলের জন্ম গাজিপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার প্রত্যন্ত বাগচালা গ্রামে। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া এই তরুণের শৈশবটা ছিল বেশ উচ্ছ্বল। শালদ নদীতে সাঁতার, পাখির বাসা ভাঙা, দল বেঁধে চড়ুইভাতির আয়োজন ছিল তার নিয়মিত কাজ। ছোটবেলায় সাপুড়ের সাপ খেলা দেখে তার ইচ্ছা জেগে ছিল সাপুড়ে হওয়ার। পরে গ্রাম্য সালিশে চৌকিদারের প্রভাব দেখে চৌকিদার হওয়ার স্বপ্ন জাগে।

শাকিলের শিক্ষাজীবন শুরু বাগচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে ঢাকায় এসে টেক্সটাইলে ডিপ্লোমা করেন। ঢাকায় আসার পর শাকিলকে শুরু করতে হয় নতুন করে সংগ্রাম। কখনো টিউশনি, কখনো শোরুমে চাকরি, কখনো মার্কেটিংয়ে চাকরি করে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে হয়েছে।

 



একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখে অ্যাডভেঞ্চার কিছু করার আগ্রহ তৈরি হয়। ভাবলেন এমন কিছু করবেন যাতে সমাজের অন্য দশ জন থেকে নিজেকে আলাদা করা যায়। স্বপ্ন দেখেন একদিন এভারেস্ট জয় করবেন। যোগাযোগ করেন এভারেস্ট জয়ী এমএ মুহিতের সঙ্গে। এমএ মুহিত জানালেন এভারেস্ট জয় করতে হলে প্রচুর হাঁটার অভ্যাস থাকতে হবে। তখন শাকিল হাঁটার পরিকল্পনা করেন। ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ‘মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার দাবিতে’ কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে পাঁয়ে হেটে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ঢাকায় পৌঁছান ২০ ফেব্রুয়ারি।

পরে অনেক কসরত করে ‘বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাব’ এর সদস্য হন। ২০১৪ সালে ভারতের উত্তরখন্ডের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে এম এ মুহিতের নেতৃত্বে নেপালের ২০ হাজার ২শত ৯৫ ফিট উচ্চতার মাউন্ট কেয়াজুরি পর্বত চূড়া আরোহণ করেন। প্রথম সফল পর্বত আরোহণের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘মাউন্ড কেয়াজুরির শিখরে বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ লিখেন। বইটি বেশ পাঠকপ্রিয়তাও পায়। ২০১৭ সালে ২০ হাজার ৫০০ ফিচ উচ্চতার মানাসলো লারকেপিকে অভিযান করেন। খারাপ আবহওয়ার কারণে ১৮ হাজার ফুট পর্যন্ত গিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। পরে মানাসলো সার্কিট ট্র্যাকিং করেন।

কলকাতা থেকে ঢাকায় পায়ে হাঁটার গল্প নিয়ে ‘পদ চিহ্ন এঁকে যাই’ নামক বই বের করেন ২০১৮ বইমেলাতে। এ বছর মার্চ-এপ্রিলে উত্তরখন্ডের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৮ হাজার ৭শত ১১ ফিট উচ্চতার ধ্রুপদীকা ডান্ডা পর্বত অভিযান করেন। সঙ্গে ছিলেন ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, সুইডেন ও আমেরিকার পর্বতারোহীরা। পৃথিবীতে ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার ১৪টি পর্বত রয়েছে। সবগুলো পর্বত আরোহণ করা শাকিলের স্বপ্ন।

 



শাকিল সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা সেমিনারে অংশ নেন, তরুণদের তার স্বপ্ন ও সংগ্রামের গল্প শুনিয়ে অনুপ্রাণিত করেন।

ইকরামুল হাসান শাকিল তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন কলকাতার মিতালী অ্যাওয়ার্ড, ইচ্ছে হলো মেডেল, পদাতিক ৪০ বছর পূর্তি পদক। এছাড়া সংবর্ধনা পান গাজীপুর ফুলবাড়িয়া ফাউন্ডেশন থেকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়