ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

স্মরণ : ভলতেয়ার

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ৩০ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মরণ : ভলতেয়ার

শাহ মতিন টিপু : ভলতেয়ার অষ্টাদশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফরাসি সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি কবি ও নাট্যকার। ১৬৯৪ সালের ২১ নভেম্বর প্যারিসে জন্ম নেওয়া এই দার্শনিক ১৭৭৮ সালের ৩০ মে প্রয়াত হন।

তিনি নাগরিক স্বাধীনতার স্বপক্ষে, বিশেষত ধর্মের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ফ্রান্সের কঠোর সেন্সর আইন উপেক্ষা করে সামাজিক সংস্কারের অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

পুরো নাম ফ্রাসোয়া মারি আরুয়ে। ভলতেয়ার তার ছদ্মনাম। এই নামেই তিনি সারা বিশ্বে পরিচিত হন। ব্যঙ্গাত্মক কিছু কবিতা রচনার দায়ে তাকে এক বছর (১৭১৭-১৭১৮) বাস্তিল দুর্গে বন্দি থাকতে হয়। এর পরপরই তিনি ছদ্মনাম গ্রহণ করেন।

'ফিলোসফিস' নামে একটি ফরাসি সংস্কারবাদী গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন ভলতেয়ার। এই গোষ্ঠীই ফ্রান্সে মুক্তবুদ্ধি ও সংস্কারযুগের প্রবর্তক। সাহিত্যের প্রায় সর্বত্র সদম্ভ বিচরণ ছিল ভলতেয়ারের। বাকচাতুর্য ও দার্শনিক ছলাকলার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। তার চিন্তা ফরাসি এবং আমেরিকান বিপ্লবকে প্রভাবিত করেছিল।

ভলতেয়ারের বাবা ফ্রাঁসোয়া আরুরে ছিলেন নোটারি ও সরকারের ট্রেজারি দফতরের এক সাধারণ কর্মকর্তা। মার নাম মার্গারেট দোমার। তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ভলতেয়ার ছিলেন সবচেয়ে ছোট। ভলতেয়ার কলেজ লুই ল্য গ্রঁ নামক বিদ্যালয়ে জেস্যুট পাদ্রিদের কাছে পড়াশোনা করেন। এখানেই ল্যাতিন ও গ্রিক ভাষা শেখেন। পরবর্তী জীবনে ভলতেয়ার ইতালিয়, স্পেনিস ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।

রাজ পরিবারের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ১৭২০ সালে ইংল্যান্ডে চলে যান ভলতেয়ার। সেখানে তিনি নির্বাসন জীবন কাটান। নানা কৌশলে অভিজাত মহলের সুনজরে আসেন। তিনি রানী ক্যারোলিনকে উদ্দেশ্য করে একটি কবিতা লিখেন। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে দুই শ’ পাউন্ড করে ভাতাও পেতেন।

ভলতেয়ারের সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে দুই হাজার বই ও ২০ হাজার চিঠি। তার আরে কিছু লেখা নতুন করে আবিষ্কৃত হয়েছে। তার বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, দ্য এইজ অব লুই , এসে অন দ্য কাস্টমস এ্যান্ড দ্য স্পিরিট অব দ্য নেশনস, জাডিগ ইত্যাদি।

ভলতেয়ার কারা অন্তরীন অবস্থায় মাত্র এগারো মাসে “হেনরিয়ের্ডে” নামে একটা মহাকাব্য রচনা করেন। কাব্যগ্রন্থটি পরর্বতীকালে তাকে প্রভূত খ্যাতি এনে দিয়েছিল। তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে অন্যতম বিবেচনা করা হয়। ১৭১৮ সালে ভলতেয়ার রচনা করেন ’ওয়েডিপে’ নামক এক ট্রাজিক নাটক। তার সাহিত্যজীবনে সর্বোচ্চ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন একজন গদ্যলেখক হিসেবে। ভলতেয়ারের লেখনীকে প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত করা হয়- কবিতা, নাটক, ঐতিহাসিক কাজ এবং দার্শনিক লেখা।

মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা উঠলে ফরাসি আলোকময় যুগের অন্যতম সেরা প্রতিভা ভলতেয়ারকে আমাদের স্মরণে রাখতেই হবে। ভলতেয়ার বলতেন, শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞরাই অশুভ শক্তির পরিণতি সম্বন্ধে জানলে চলবে না, তাঁদের জানাতে হবে দেশের তরুনদের। তবেই তারা যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে একে প্রতিহত করতে পারবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মে ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়