স্মরণ : মহাকবি কায়কোবাদ
শাহ মতিন টিপু: ঊনিশ শতকের কবি মাইকেল মধুসূধন দত্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মহাকাব্য রচয়িতা। পরবর্তীকালে তার ধারা অনুসরণ করে যারা মহাকাব্য রচনা করেন তাদের মধ্যে কায়কোবাদ অন্যতম।
৭৯০ পৃষ্ঠার মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ রচনার জন্য তাকে মহাকবি বলা হয়। এই মহাকবির ৬৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। লিখতেন মুন্সী কায়কোবাদ নামে।
মহান ভাষা আন্দোলনের পূর্ব বছরে ১৯৫১ সালে ২১ জুলাই তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। পুরাতন আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন হয়। তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন। জীবনের সুদীর্ঘ ৮২ বছরই তিনি সাহিত্য চর্চা করেছেন।
মহাকবির জন্ম ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জের আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে। ওই বছরটি ছিল ঐতিহাসিক সিপাহী বিপ্লবের বছর।
স্বদেশ প্রেম, সত্যনিষ্ঠা আর ইতিহাস ঐতিহ্য প্রীতি ছিল তার কবি প্রতিভার মৌল বৈশিষ্ট্য। তাকে বলা হয়, সৌন্দর্যের উপাসক। স্বভাব কবির ন্যায় তিনি তার কাব্যে অপূর্ব শিল্পচাতুর্যে প্রকৃতি ও নারীর স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। সঙ্গীত রচনায়ও তার হাত ছিল দক্ষ।
বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ তাকে ‘কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ’ ও ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
অতি অল্প বয়সে তার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে। মাত্র তেরো বছর বয়সে প্রথম কাব্য ‘বিরহবিলাপ’ প্রকাশিত হয়। এ কাব্যে তিনি পিতা-মাতার বিয়োগ ব্যথা প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের জীবনের কষ্টকে পরম সহানুভূতির সাথে তুলে ধরেছেন। কাব্যটি প্রকাশিত হবার পর সর্বমহলে তিনি প্রশংসিত হন।
কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি,/ মর্মে মর্মে সেই সুর,/ বাজিলো কি সুমধুর,/ আকুল হইলো প্রাণ, নাচিলো ধমনি।/ কি-মধুর আযানের ধ্বনি’।/ বিখ্যাত এই কবিতাটিও মহাকবি কায়কোবাদ রচিত। আধুনিক শুদ্ধ বাংলায় গীতিকাব্য, কাহিনী কাব্য, কাব্য উপন্যাস রচনা করে গেছেন তিনি।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে : কুসুম কানন, অশ্রুমালা, মহাশ্মশান, শিবমন্দির, অমিয়ধারা, শ্মশান ভস্ম, মহররম শরীফ, প্রেমের ফুল, প্রেমের বাণী, প্রেম-পরিজাত, মন্দাকিণী-ধারা ও গওছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ।
কায়কোবাদের সাহিত্য সাধনার বড় কৃতিত্ব এই যে তিনি একাধারে সফল গীতিকবি অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম মহাকবি। ঊনিশ শতকে মুসলমান কবি সাহিত্যিকের যথার্থ অভাব ছিল তাছাড়া মুসলমানগণ বাংলা সাহিত্যকে তখনও পর্যন্ত অনেকটাই ঘৃণার চেখে দেখতো- সেই সময়ে তিনি হিন্দু-মুসলমান সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন।
প্রেম এবং প্রকৃতি প্রায় পাশাপাশি এসেছে তার কবিতায়। প্রকৃতি বিষয়ে এত বেশি কবিতা তার আমলে অন্য কোন কবি লিখেননি। আজীবন পল্লী প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করে প্রকৃতি প্রেমিক হয়েছেন কবি। সামান্য বনফুল নিয়েও অসামান্য কবিতা লিখেছেন তিনি। সে যে বন ফুল।
না পরে ঢাকাই শাড়ী, বানারসী, নীলাম্বরী,
বাঁধে না কবরী, তার এলোথেলো চুল।
সে যে বন ফুল!
(বনফুল অশ্রুমালা)
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুলাই ২০১৮/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন