ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্মরণ : সত্যজিৎ রায়

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মরণ : সত্যজিৎ রায়

শাহ মতিন টিপু : সত্যজিৎ রায়ের বড় পরিচয় হচ্ছে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতা।অসাধারণ সব চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে তুলে ধরেছেন বিশ্ব মানচিত্রে।

সত্যজিৎ রায়ের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল প্রয়াত হন এ নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা। চলচ্চিত্র নির্মাতা ছাড়াও  সাহিত্য, চিত্রকলা, নাটক, সংগীত- এসব বিষয়েও তিনি অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। শিল্পকলার নানা শাখায় ছিলো তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। বাংলা সাহিত্যেও অবদান রেখেছেন তিনি। সৃষ্টি করেছেন ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কুর মতো অবিস্মরণীয় চরিত্র।

১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও সত্যজিৎ রায় ছিলেন বাংলাদেশেরই ছেলে। তার আদিপুরুষদের বসতি ছিল বাংলাদেশেরই কিশোরগঞ্জে। তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন একাধারে লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক, প্রকাশক ও জ্যোর্তিবিদ। বাংলা শিশু সাহিত্যে তার রচনাকর্ম আজও অতুলণীয়। উনিশ শতকের শেষভাগে তিনি এদেশ থেকে সপরিবারে কলকাতায় চলে যান।

আবার সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। এমন একটি পরিবারেই জন্ম ছিল এই প্রতিভাধর চলচ্চিত্রকারের।

যদিও জন্মের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছিলেন, মা সুপ্রভা দেবী তাকে মননশীল পথেই গড়ে তোলেন। মা সুপ্রভা দেবীর ইচ্ছাতেই শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।

কর্মজীবনে বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশুতোষ সংস্করণের প্রচ্ছদ আঁকতে গিয়ে বইটিতে তিনি ভীষণ মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় এ উপন্যাসটি নিয়েই প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

ছবিটি যেমন দর্শক প্রশংসা পায় তেমনই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি  হিসেবে পুরস্কৃত হওয়াসহ ১১টি আর্ন্তজাতিক পুরস্কার পায় । পথের পাঁচালি-এর মাধ্যমে শুরু হয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পথচলা।বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা সৃষ্টিতে সত্যজিৎ রায় ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

পরবর্তী ছবি ‘অপরাজিত’ তাকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। ছবিটি ইতালির ভেনিসের বিখ্যাত গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার লাভ করে। এরপর তিনি একে একে নির্মাণ করেন  ‘অপুর সংসার’, ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘চারুলতা’, ‘দেবী’, ‘মহানগর’, ‘অভিযান’, ‘কাপুরুষ’, ‘মহাপুরুষ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘জনারণ্য’, ‘হীরক রাজার দেশ’, ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ও  ‘আগুন্তক’। আর ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭ টি ছবি।পথের পাঁচালি থেকে আগন্তুক, দীর্ঘ এক চলচ্চিত্রকারের জীবন তার।

অমর এই শিল্পী সেলুলয়েডে এঁকেছেন মানুষের জীবনের নানামুখি উত্থান পতনের ছবি। গল্প বলার ছলে তিনি বলেছেন মানুষের আবেগ, অনুভূতি, কাব্যময়তা, অসহায়ত্ব, মানবিকতা, মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা বেদনার কথা। তার কাছে ক্যামেরা যেন ছিল রঙ তুলি। আর তা দিয়ে তিনি এঁকেছেন জীবনের বহুমুখি ছবি। জীবনকে দেখেছেন অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ এপ্রিল ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়