ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হঠাৎ এক পরিবারের ৭ সদস্য অপ্রকৃতিস্থ

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৭ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হঠাৎ এক পরিবারের ৭ সদস্য অপ্রকৃতিস্থ

মানসিক ভারসাম্যহীন কয়েকজন (ছবি : এম.শাহীন গোলদার)

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : হঠাৎ এক পরিবারের ৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। এদের কাণ্ডকারখানা দেখতে সে বাড়িতে এখন লেগেই আছে মানুষের ভিড় ।

একদিকে এদের পাগলামি অন্যদিকে কৌতূহলী মানুষ,  তালা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের রহমত বিশ্বাসের ওই বাড়িজুড়েই এখন শোরগোল।

বৃদ্ধ রহমত বিশ্বাস ও তার স্ত্রী নবীজান বিবি জানান, তাদের  বড় মেয়ে ফরিদা বেগমের বিয়ে হয়েছে ঝিনাইদহ জেলার বুয়াভাটিয়া গ্রামে। স্বামীর নাম গফফার বিশ্বাস। শ্বশুরবাড়িতে তার মেয়ে নির্যাতিত হচ্ছিল। সম্প্রতি মেয়েকে পাগল আখ্যায়িত করে তাকে নিয়ে আসার জন্য খবর দেয়।

বৃদ্ধ রহমত দম্পতি জানান, খবর পেয়ে রহমত বিশ্বাসের ছেলে হায়দার গিয়ে বোন ফরিদাকে কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন। যশোরে আসার পর ফরিদা তাকে বলেন, ‘আমাকে বাপের বাড়ি নিয়ে গেলে তোরা সবাই পাগল হয়ে যাবি’। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাপের বাড়ি নিয়ে আসা হয় ফরিদাকে। এর পর থেকে বাপের বাড়ির সবাই একে একে পাগল হতে শুরু করে।

ঘটনা জানতে পেরে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন সোমবার দুপুরে রহমতের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন।

ফরিদা ছাড়াও যারা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছেন তারা হলেন : রহমত বিশ্বাসের তিন ছেলে আবদুস সবুর বিশ্বাস (২৫), আবদুল হালিম বিশ্বাস (২৮) ও আবদুল গফুর বিশ্বাস (১৬)। ফরিদার মেয়ে আয়েশা খাতুন (৬), ফরিদার বোনের ছেলে যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামের বাবু বিশ্বাসের ছেলে মেহেদি বিশ্বাস (১৩) ও ফরিদার বোন সালেহা খাতুন (১৪)।

রহমত বিশ্বাসের বাড়িতে মানুষের ভিড়


রহমত বিশ্বাসের বাড়ি গেলে দেখা যায়, পা শিকল বাঁধা অবস্থায় অস্বাভাবিক আচরণ করছে তারা। বাড়ির অন্য সদস্যরা নিজেরাও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন। তবে তারা সবাই ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রহমত বিশ্বাসের প্রতিবেশী আবদুর রহমান ও জাহিদ বিশ্বাস জানান, ওরা একসময় খুব গরিব ছিল। বছর কয়েক হলো তারা এখন ধনী পরিবার। বাড়ি পাকা করেছেন, জমি কিনেছেন রহমত বিশ্বাস। তার মেয়ে সালেহা খাতুন খলিলনগর স্কুলের  দশম শ্রেণির ছাত্রী। নাতি মেহেদি হাসান একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। তারাও অস্বাভাবিক আচরণ করছে।

গ্রামময় ছড়িয়েছে, কিছুদিন আগে রহমত বিশ্বাসের বড় মেয়ে ফরিদা প্রসাদপুরের বিলের মধ্যে একটি স্বর্ণমূর্তি পেয়েছিলেন। সেই মূর্তি বিক্রির পর তারা অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়। সে কারণে প্রথমে ফরিদা ও পরে অন্যরা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। তবে রহমতের পরিবারের দাবি, তাদের মেয়ে ফরিদাকে তদবির করে পাগল বানিয়ে ফেলেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন জানান, তারা দৈহিকভাবে সুস্থ, তবে মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের কর্মকাণ্ড মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো । কথাবার্তা অসংলগ্ন। কখনো কখনো মারমুখী আচরণ করছে। পুলিশের লোক তাদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি তাদেরকে তালা অথবা সাতক্ষীরা হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেওয়ার। কিন্তু বাড়ির লোকজন বলছে এসব জিনের দোষ। বাড়ির বাইরে পাঠালে আরো সমস্যা হবে। দুই ঘণ্টা ধরে তাদের বাড়িতে বসে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি আমরা।’



রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/৭ মার্চ ২০১৭/এম.শাহীন গোলদার/টিপু/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়