হরতাল সমর্থকদের মিছিলে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক : রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, সুন্দরবন-বিনাশী সব চুক্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আধা বেলা হরতাল চলছে।
 

সকাল থেকে দফায় দফায় শাহবাগ মোড়ে হরতালকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। হরতালকারীরা যতবারই শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবারই পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। দুপুর ১২টার দিকে হরতাল সমর্থকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেয়। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে আবার শাহবাগ মোড়ের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ আবারও কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছোড়ে। হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া করে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীদের দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।  এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আরো দুজনকে আটক করেছিল পুলিশ। এ নিয়ে আটকের সংখ্যা দাঁড়াল চারজনে।

সকালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেয় হরতাল সমর্থকেরা। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। হরতাল সমর্থকেরা উঠে না গেলে বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর সকাল থেকে যতবারই আন্দোলনকারীরা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবারই পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

এদিকে শাহবাগ মোড়ে হরতাল সমর্থকদের ওপর পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছে হরতাল সমর্থকেরা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরসহ ১০ জন কর্মী আহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে। এ ছাড়া পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক কালেরকণ্ঠের প্রধান আলোকচিত্রী শেখ হাসানের মাথা ফেটে গেছে। আহত হয়েছেন এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার ইশান ও ক্যামেরাম্যান আবদুল আলীম।

 

আহতদের পাঁচজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল ক্যাম্প পুলিশের উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।

হরতাল সমর্থকেরা একপর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির আশপাশে অবস্থান নেয়। সেখানেই স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হরতাল সমর্থকেরা আবার মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে আসার চেষ্টা করলে দুজন হরতাল সমর্থককে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়েছে পুলিশ। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানায়নি পুলিশ। পরে তাদের নাম-পরিচয় জানানো হবে।

রাবার বুলেট নিক্ষেপ সম্পর্কে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হাসান বলেন, ‘হরতালকারীদের আহত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুধু জলকামান ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছি। এ ছাড়া আর কোনো কিছু নিক্ষেপ করিনি।’

পল্টনে হরতালকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে দেওয়া হলেও এখানে কেন দেওয়া হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শাহবাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে অবরোধ করলে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হতো। এ কারণে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ মোড়ে দুটি হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রয়েছে। এ কারণে হরতালকারীদের সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। তারা যদি মোড় অবরোধ করে তাহলে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হতো।’

 

কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হরতালকারীরা শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ করলে আমরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতাম না। কিন্তু তারা পুলিশের ওপরে হামলা করায় টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’

এদিকে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করছিল একদল হরতাল সমর্থক। সেখানেও পুলিশ তাদের ঘিরে রেখেছে।

এ ছাড়া তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা এই হরতালের সমর্থনে মিরপুর, পল্টন, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জানুয়ারি ২০১৭/নাসির/এসএন