ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হাকালুকিতে এবার মরছে হাঁস

হোসাইন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাকালুকিতে এবার মরছে হাঁস

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : বন্যায় ধানের পর এবার হাকালুকি হাওরে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও হাঁস। কিছু দিন আগে কৃষকরা হারিয়েছে বোরো ধান, আর এখন মৎস্যজীবীরা মাছ ও খামারিরা হাঁস। হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষক এবং জেলে পরিবারে এখন হাহাকার। 

হাওরে বন্যায় এলাকায় গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বাড়িতে পালিত গরু-ছাগল অন্য এলাকায় সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক কৃষক কম মূল্যে গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাতাসে দুর্গন্ধ ও হাওরের খাদ্য খেয়ে গরু অসুস্থ হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন তারা।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এত বড় হাওরে মাছ মরে যাচ্ছে কিন্তু মাছ বাঁচানো বা এ থেকে রক্ষা পেতে মৎস্য বিভাগের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা চোখে পড়েনি।

ছয় দিন ধরে হাওরে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ও বড় মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠছে। কী কারণে মাছ মারা যাচ্ছে- তা জানা যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, বৃষ্টির কারণে হাওরের বোরো ধান থেকে কীটনাশক পানিতে ছড়িয়ে পড়ায় মাছ বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছে। জেলা বা উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে এর সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, ধারণা করা হচ্ছে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কারণে সেই পঁচা ধানের দুর্গন্ধ, জমিতে প্রয়োগ করা কীটনাশক ও সারের কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।

এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর মৌলভীবাজার জেলা ছাড়িয়ে সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত। পাঁচটি উপজেলা (কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ) জুড়ে ২৩৮টি বিল নিয়ে এ হাওরের আয়তন ২০ হাজার ৪০০ হেক্টর। এই হাওরে যেমন ধান জন্মে, তেমনি পাখি ও মাছের বিশাল অভয়াশ্রম।

 



সাদীপুর গ্রামের বেলাল মিয়া ও স্থানীয় পাইকারি মৎস্যজীবী মর্তুজা আলী জানান, ছয় দিন আগে রাতে খুব বৃষ্টি হয়। এরপর থেকে হাওরে শোল, গজাল, বোয়াল, বাইম, পুঁটি, কালি বাউস, বাউস ইত্যাদি মাছ মরে ভেসে উঠছে। স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়। এরপর থেকে প্রতিদিনই হাওরে ছোট-বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। হাওরের পানি ময়লা-আবর্জনাযুক্ত হয়ে পড়েছে। পানির উপরে আবছা লাল ও কালো রঙের স্তর দেখা যাচ্ছে।

হাওর পাড়ের মানুষ জানায়, হাওর থেকে দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। এর আগে তারা এ পরিস্থিতিতে পড়েননি। বয়স্ক কৃষকরা বলেন, বহু বন্যা দেখেছেন কিন্তু এ রকম ধান, মাছ ও হাঁস মারা যেতে দেখেননি।

মাছ মরার কারণে কয়েক দিন স্থানীয় হাট-বাজারে মাছ প্রায় উঠছে না। কিছু কিছু মাছ বাজারে বিক্রির জন্য আনলেও কেউ কিনছে না। বর্তমানে হাওরে জেলেরা মাছ ধরছে না বলে জানালেন স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

তবে মঙ্গলবার ও বুধবার হাওরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন অংশে মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে চুন ফেলতে দেখা গেছে। বিশাল হাওরে এগুলো কিছুই না বলে স্থানীয়রা জানান।

 



ভুকশিমইল ইউনিয়নের ইমরুল কায়েস বলেন, বাতাসের দুর্গন্ধে বাড়ি থাকা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ আসছে। এটা স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।

ভুকশিমইল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনফর আলী মধু (৫৫) জানান, ছয় দিন ধরে হাওরে অজ্ঞাত কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। কিন্তু মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কেউ কথা বলেননি।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুজ্জামান জানান, তিন উপজেলার জন্য সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে হাকালুকিতে চুন প্রয়োগ করা হয়েছে। বুধবার থেকে মাছ মরা বন্ধ হয়েছে। আশ করা যায়,  এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।



রাইজিংবিডি/মৌলভীবাজার/১৯ এপ্রিল ২০১৭/হোসাইন আহমদ/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়