ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের নয়টি চূড়াই নেই!

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৩ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের নয়টি চূড়াই নেই!

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা: হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির। সিরাজগঞ্জে প্রায় পাঁচ শ’ বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দর্শনে পর্যটকদের জন্য যথোপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি সময়েরই দাবী।

পর্যটন আয়ের আরেকটি ভালো উৎস হয়ে উঠতে পারে এই মন্দির। মন্দিরের চারপাশে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এই মন্দিরটি হয়ে উঠবে দেশের পর্যটন কেন্দ্রের অনন্য একটি স্থান।

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নে এই মন্দিরের অবস্থান। হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরটি তিনতলা বিশিষ্ট। মূল মন্দিরের আয়তন ১৫ বর্গমিটারেরও বেশি। মন্দিরের নির্মাণ সময় সম্পর্কিত কোনও শিলালিপি পাওয়া না গেলেও আনুমানিক ১৭০৪-১৭২৮ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে রামনাথ ভাদুরী নামে জনৈক তহসিলদার এটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। অনেকের মতে, রামনাথ জমিদার ছিলেন।

বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব হিন্দু মন্দির দেখতে পাওয়া যায় এটি তার অন্যতম একটি। উঁচু বেদীর উপর নবরত্ন পরিকল্পনায় নির্মিত মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৫.৪ মিটার এবং প্রস্থ ১৩.২৫ মিটার। একসময়ে মন্দিরে নয়টি চূড়া ছিলো বলে নবরত্ন মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়। দুঃখজনক সত্য এই যে, উপরের রত্ন বা চূড়াগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

মূল মন্দিরের বারান্দায় সাতটি এবং ভেতরের দিকে পাঁচটি প্রবেশপথ আছে। দ্বিতীয় তলা আবার বারান্দাহীন। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। এসব অলঙ্করণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানান দেবদেবীর মূর্তি, লতা-পাতা ইত্যাদি।

এ মন্দিরের নির্মাণ নিয়ে নানান গল্প প্রচলিত আছে এ অঞ্চলে। কথিত আছে, দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথের কাছের মানুষ ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুরী। প্রাণনাথ দিনাজপুরে ঐতিহাসিক কান্তজি মন্দির নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সঙ্কটে পড়েন। ফলে বছরের রাজস্ব পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন বন্ধু রামনাথ ভাদুরী। নিজ কোষাগারের টাকা দিয়ে রাজা প্রাণনাথের বকেয়া শোধ করে দেন। তবে এই অর্থ ফেরতের শর্ত হিসেবে দিনাজপুরের কান্তজি মন্দিরের রূপে হাটিকুমরুলে একটি মন্দির নির্মাণের অনুরোধ জানান।  রামনাথ ভাদুরীর শর্তানুসারেই রাজা প্রাণনাথ কান্তজি’র আদলে হাটিকুমরুলে এ নবরত্ন মন্দির নির্মাণ করে দেন। আবার অনেকের মতে রাখাল জমিদার হিসেবে পরিচিত রামনাথ ভাদুরী তার জমিদারীর সঞ্চিত অর্থ দিয়েই এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের আশপাশে রয়েছে আরও তিনটি ছোট মন্দির। উত্তর পাশে আছে শিব-পার্বতী মন্দির। পাশে দোচালা আকৃতির চন্ডি মন্দির এবং দক্ষিণ পাশের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে আছে শিব মন্দির। সবগুলো মন্দিরেরই বর্তমানে দেখভাল করছে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

কালের বিবর্তনে ভারত উপমহাদেশে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত, দেশ বিভাগ ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পূর্বপুরুষেরা। যুগযুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে ঝোঁপঝাড় বুকে নিয়ে লুকিয়ে ছিল এই নবরত্ন মন্দির। অরক্ষিত এই নবরত্ন মন্দিরের অনেক মূল্যবান প্রাচীন সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে দেশি-বিদেশি দুর্বৃত্তরা। পরে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ঐতিহ্যের এই নিদর্শণ খুঁজে বের করেন।

যারা এই মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগে যেতে চান মনে রাখবেন- হাটিকুমরুলে রাত যাপনের জন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। সারাদিন ঘুরেফিরে রাতে এসে থাকতে পারেন সিরাজগঞ্জ শহরের কুটুমবাড়ী, সনি আবাসিক ও আলিশানসহ যে কোন হোটেলে।

সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত এবং খুব জনপ্রিয় খাবার ধানসিড়িঁর, তমিজ ও সম্পার দই খেতে ভুলবেন না এবং রয়েছে নানা ধরণের দেশীয় খাবার। রয়েছে অসংখ্য রেষ্টুরেন্ট আপনার ইচ্ছেমত খেতে পারবেন।





রাইজিংবিডি/ সিরাজগঞ্জ/২৩ এপ্রিল ২০১৯/অদিত্য রাসেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়