ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

১৮ বছর হলেই রক্ত দেওয়া যায়

ফজলে আজিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩২, ২৫ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১৮ বছর হলেই রক্ত দেওয়া যায়

ফজলে আজিম : আসাদুজ্জামান (৫০) পেশায় একজন রেলওয়ে কর্মকর্তা। কিডনি জটিলতায় ভুগছেন গত ১০ বছর ধরে। একসময় ডায়ালিসিসের জন্য প্রতি সপ্তাহেই তাকে রক্ত দিতে হতো। একবার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। তখন ১৫ দিনে আমাদেরকে ৩২ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে হয়েছিল।

 

রক্তের গ্রুপ এবি (AB+) পজেটিভ। খুবই রেয়ার গ্রুপ, দরকারের সময় রক্ত সংগ্রহ করা খুবই কষ্টের। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে এখনো তাকে রক্ত দিতে হয়।- কথাগুলো মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে বলছিলেন তার ভাই মোজাম্মেল হক। তিনিও পেশায় একজন রেলওয়ে কর্মকর্তা।

 

তিনি আরো জানান, আমার ভাই (আসাদুজ্জামান) গত বছর হজব্রত পালন করেছেন। এজন্য তিনি সব রক্তদাতার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।

 

এরকম আরো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হলো শান্তিনগরে অবস্থিত কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের ল্যাবে। যারা কয়েকঘণ্টা ধরে রক্তের অপেক্ষায় বসে আছেন। এ ধরনের মানুষদের জন্য কাজ করছে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের ভ্রাম্যমাণ ইউনিট। যারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ব্লাড ক্যাম্প করে আসছেন।

 

 

দুই বছর ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম ভ্রাম্যমাণ টিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত তুহিন দাশ টিটো। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘রক্তদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক রক্তদাতাই একেকজন নায়ক। রক্ত দিয়ে তারা জীবন বাঁচান। মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় অন্যেরা যেখানে বসে বসে দেখেন সেখানে তারা সাহস নিয়ে বীরের মতো রক্ত দিয়ে আসেন। রক্তগ্রহীতা ফিরে পান নতুন জীবন। আমরা সেইসব রক্তদাতাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই।’

 

তিনি আরো জানান, ১৮ বছর হলেই রক্ত দেওয়া যায়। বছরে রক্ত দেওয়া যায় ৩-৪ বার। এজন্য ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। রক্তদাতার ন্যূনতম ওজন হতে হবে মহিলার ক্ষেত্রে ৪৫ কেজি, পুরুষের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি।

 

কেন রক্ত দেবেন?

রক্তদানের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও পরিতৃপ্ত জীবন। স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত রক্তদানের উপকারিতা এখন বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশে বাঁধন, রেড ক্রিসেন্ট, সন্ধানী, কোয়ান্টামসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে রক্তদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমের অর্গানিয়ার তুহিন দাশ টিটো বলেন, ‘আমরা ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ব্লাড ক্যাম্প করি। ক্যাম্পের পাশাপাশি আমাদের একটি লক্ষ্য থাকে রক্তদান বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এতে করে স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।’

 

রক্তদান সম্পর্কিত আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন তুহিন দাশ টিটো।

 

রক্তচাপের সঙ্গে স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগের সম্পর্ক কি?

উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদপিণ্ডে রক্তনালীতে চর্বি জমে, ব্লক ধরা পড়ে। এতে করে রক্ত চলাচলে বাধার সৃস্টি হয় এবং হার্টের ওপর রক্তের অতিরিক্ত চাপ পড়ে। চিকিৎসকেরা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেতে দেন।

 

 

যারা নিয়মিত রক্তদান করেন তাদের রক্তের ঘনত্ব কম থাকে। এতে করে সরু আর্টারির মধ্যে দিয়েও অনায়াসে রক্ত চলাচল করতে পারে। ফলে হার্টে চর্বি জমে ব্লক হওয়ার আশংকাও কমে যায় এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।

 

ডায়াবেটিস থাকলেও কি রক্ত দেওয়া যায়?

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের প্যানক্রিয়াসে ইনসুলিন তৈরি হয় না বলে তাদেরকে সুগার বার্ণ করার জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরের মধ্যে ভারসাম্য চলে আসে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারাও রক্ত দিতে পারেন। তবে যারা ইনসুলিন নেওয়া শুরু করেছেন তারা রক্ত দিতে পারবেন না।

 

রক্তদাতা ও গ্রহীতার কোনো বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত?

আপনজনের রক্ত হলেও তা পরীক্ষা করেই নেওয়া উচিত। এতে করে রক্তের মাধ্যমে সংক্রামক ব্যাধি ছড়ানোর ঝুঁকি কমবে। নিয়মিত রক্তদাতা ৩ মাস পরপর তার শরীরের চেকআপ ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। আমরা প্রত্যেক রক্তদাতাকে রক্তদানের পর পাঁচটি টেস্টের রিপোর্ট ফ্রি দিয়ে থাকি। এগুলো হচ্ছে হেপাটাইটিস বি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, গণেরিয়া ও এইডস। দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই রক্তের পাঁচটি টেস্টের রিপোর্ট পেয়ে যান।

 

নিয়মিত রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় কি-না?

রক্তদান করলে দাতার কোনো প্রকার শারীরিক ক্ষতির আশংকা থাকে না। রক্ত নেয়ার আগে চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই তারপর রক্ত নিয়ে থাকেন। রক্ত দিতে আসা কারো ওজন কম থাকা কিংবা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে আমরা তাদেরকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দিই। তবে রক্তদানের পর এক ঘণ্টা ভারী কোনো খাবার খাওয়া কিংবা ভারী কোনো কাজ করা উচিত নয়।

 

রক্তদানের পর এ শূন্যতা কীভাবে পূরণ হয়?

আমাদের শরীরের লোহিত রক্তকণিকার আয়ু হচ্ছে তিন মাস। আর তাই তিনমাস পর পর রক্ত দিলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। আমরা জানি রক্তের ৭০ ভাগই হচ্ছে পানি। রক্তদানের পর পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে বের হওয়া পানি শূন্যতা সহজেই পূরণ হয়ে যায়।

 

সার্বিক তথ্য সহায়তায়: ডা. মনিরুজ্জামান কো-অর্ডিনেটর, স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রম।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ নভেম্বর ২০১৬/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়