ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে বিতর্কহীন পাঠ্যবই প্রণয়নের লক্ষ্য

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০২, ২৪ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২০১৮ শিক্ষাবর্ষে বিতর্কহীন পাঠ্যবই প্রণয়নের লক্ষ্য

আবু বকর ইয়ামিন : আগামী ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার।

এক্ষেত্রে পরিকল্পনা রয়েছে মাধ্যমিক স্তরের সব বই সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রণয়ন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে সুখপাঠ্য করে তোলা। বইতে কোনো ধরনের অসামঞ্জ্যতা না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে আগামী বছর বিতর্কহীন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে চাইছে সরকার। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকার ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বরেণ্য শিক্ষাবিদ, শিক্ষক, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুটি পৃথক কমিটিও গঠন করেছে। কমিটি আগামী ১৫ জুনের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত পরিমার্জন কপি জমা দেবে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা যায়।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, একটি কমিটি ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে পাঠ্যবই আরো পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দেবে। আরেক কমিটি নবম-দশম শ্রেণির কয়েকটি বই পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার দায়িত্ব পালন করবে। বছরের শুরু থেকে এ বিষয়ে কাজ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুটি কমিটি।  কমিটিকে জানানো হয়েছে যে, চলতি শিক্ষাবর্ষের কিছু পাঠ্যবইয়ের পাঠ্যসূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু আগামী শিক্ষাবর্ষের বইতে এ ধরনের অসামঞ্জ্যতা দেখতে চাইছে না সরকার।

এ সংক্রান্ত সব কাজ খুব সুচারুরূপে করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ন চন্দ্র সাহা। তিনি বলেন, ‘এ বছর পাঠ্যপুস্তকে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে কথা উঠে। এ জন্য কয়েকজনকে শাস্তিও প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীকালে এ জাতীয় কোনো ভুল যেন না হয় এবং বইয়ের পাঠ্যবিষয় নিয়ে যাতে কোনো প্রকার বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে পরিমার্জন কপি এনসিটিবিতে জমা দেওয়া হবে। তারপর বাকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’ তবে বেশি সময় ক্ষেপণ হবে না বলে জানান তিনি।

নবম-দশম শ্রেণির নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ইনামুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘২০১২ সালের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা কমিটি তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। তারা পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে পাঠ্যবই আরো পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দেবেন।’

কারিকুলাম কমিটিও ১৫ জুনের মধ্যে জমা দেবেন। তবে এখন পর্যন্ত কী কী পরিবর্তন এসেছে, সে বিষয়ে তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের টেন্ডার সব রেডি করা আছে। যারা পরিমার্জনের দায়িত্বে আছেন তারা বলেছেন কারেকশনের পর ফাইনাল সিডি দিয়ে দেবেন। যেহেতু ফাইনাল সিডি দিয়ে দেবেন তাই সংশোধিত ফাইল আসার পর খুব বেশি সময়ক্ষেপণ হবে না। এ বছর পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে সেগুলোর জন্য সাতজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ জাতীয় ভুল যেন না হয় সেটি মাথায় রেখেই নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হবে।’

এর আগে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়াতে কিছু বিষয় বাদ দেওয়া, অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ব্যাংক তৈরিসহ ১৫ দফা সুপারিশ করেন শিক্ষাবিদরা।

শিক্ষাবিদদের ওই সুপারিশের ভিত্তিতেই পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা এবং নবম-দশম শ্রেণির কয়েকটি বই পরিমার্জনে কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রায় দেড় যুগ পর ২০১২ সালে নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে সরকার। ওই পাঠ্যক্রমের আলোকে ২০১৩ সালের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পায় শিক্ষার্থীরা।

২০১২ সালের ওই পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই অধিকতর পাঠযোগ্য করতে সুপারিশ দিতে নতুন একটি কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনজুর আহমদ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তানজীল আশ্রাফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহাও এই কমিটির সদস্য।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

নবম-দশম শ্রেণির নির্বাচিত কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করার লক্ষ্যে আরেক কমিটির সদস্য করা হয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদকে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম, উদয়ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ইনামুল হক সিদ্দিকী এই কমিটির সদস্য সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

কমিটিকে নবম-দশম শ্রেণির কয়েকটি পাঠ্যবই নির্বাচন করে সেগুলোকে পরিমার্জনের জন্য একটি ‘টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে বলা হয়েছে যাতে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানো যায়।

নির্বাচিত পাঠ্যপুস্তকগুলো পরিমার্জনের মাধ্যমে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজ করে তোলার জন্য এই কমিটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিলেও জাতীয় কারিকুলাম কো-অর্ডিনেটর কমিটি (এনসিসিসি) পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন করবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথমে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞানের চারটি এবং মানবিকের একটি বই সুখপাঠ্য ও সহজ করা হবে। প্রয়োজনে এসব বই রঙিন করে ছাপানো হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মে ২০১৭/ইয়ামিন/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়