ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

৪৫ বছর পরেও কেরানীগঞ্জে অরক্ষিত শহীদদের গণকবর

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৪৫ বছর পরেও কেরানীগঞ্জে অরক্ষিত শহীদদের গণকবর

আসাদ আল মাহমুদ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

গণহত্যার পর থেকে ঢাকা শহরে আতঙ্কিত নিরস্ত্র লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দলে দলে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা কেরানীগঞ্জে আসতে শুরু করে। এ খবর জানতে পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে হামলা চালায়। ভয় ও আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে সাধারণ মানুষ।  ওই দিন প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসেই চলেছে কেরানীগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ।

 

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য শহীদকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও অরক্ষিত ও অবহেলায় রয়েছে শহীদদের কবর। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পার হলেও কেরানীগঞ্জের এসব গণকবর সংরক্ষণের করা হয়নি।

 

কেরানীগঞ্জের জিনজিরাহ, নজরগঞ্জ, ইমামবাড়ি কবরস্থানে শহীদদের কবরের সামনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

 

 

এদিকে কেরানীগঞ্জের নজরগঞ্জ কবরস্থানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবরের সামনে জঙ্গল দেখা গেছে। কতজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে এখানে দাফন করা হয়েছে তার কোনো তালিকা নেই। তবে দু/একজন মুক্তিযোদ্ধার কবরের সামনে নামফলক রয়েছে। নামফলকে নাম ঠিকানা লেখা থাকলেও অস্পষ্ট। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসানের কবরের দেয়াল ভাঙা।

 

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা চালায়। অনেকে জীবন বাঁচাতে ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ আসে। ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। বাদ পড়েনি নারী-বৃদ্ধ, শিশু কেউই। গণহারে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। এদেরকে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলকায় গণকবর দেওয়া হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর। কিন্তু আজ পর্যন্ত এদের কোনো তালিকা করা হয়নি। তাই কেরানীগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে আমার দাবি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবরগুলোর তালিকা করাসহ কবরের প্রাচীর করে দেওয়া হোক।’

 

জিনজিরার বাসিন্দা ইব্রাহিম বেপারি বলেন, ‘১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কেরানীগঞ্জের ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালায় পাকহানাদার বাহিনী। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেরানীগঞ্জ এক রক্তাক্ত জনপদে রূপ নেয়। মেশিন গান, মর্টারের গোলায় গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়। লুটিয়ে পড়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ তথা মহানগরী ঢাকা থেকে প্রাণভয়ে ছুটে আসা বিপন্ন মানুষ। সেই হত্যাযজ্ঞে প্রায় ১০ হাজার নারী, পুরুষ, শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা শহীদ হয়েছে।’

 

 

কেরানীগঞ্জের নজরগঞ্জের বাসিন্দা আমিনুল হক মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল গভীর রাতে প্রচণ্ড গুলির শব্দ শুনি। নারী –পুরুষ, শিশুরা তখন আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ অবস্থা দেখে বুড়িগঙ্গা নদীতে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখে মাথায় কচুরিপানা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যে শুনতে পাই পাক হানাদার বাহিনী গুলির আওয়াজ। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। বাড়িঘর লুট করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সর্বদা আর্তচিৎকার, আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। সেই ভয়াল দিনটি চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য কদমদলী চত্বরে  নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।’

 

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে কদমতলী গোলচত্বরে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য ‘নুর ইসলাম ভাস্কর্য’। কেরানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুর ইসলামের নামে নির্মাণ করা হয়  ভাস্কর্যটি। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই ভাস্কর্যটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।

 

ভাস্কর্যের  বেষ্টনির অনেকাংশই চুরি হয়ে গেছে। পড়ে গেছে ভাস্কর্যের চারপাশের টাইলস। পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা ভাস্কর্য। এমনকি ভাস্কর্যের যে অংশে শহীদদের নাম লেখা আছে সেখানেও লাগানো আছে পোস্টার। ভাস্কর্যের ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে  ভবঘুরে ও টোকাইরা।

 

 

 

রাই‌জিং‌বি‌ডি/ঢাকা/১৭ ডি‌সেম্বর ২০১৬/‌হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়