ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৫০ জন ঋণগ্রহিতা ৬ বছরেও শনাক্ত হয়নি

সৌরভ পাটোয়ারী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০০, ৪ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৫০ জন ঋণগ্রহিতা ৬ বছরেও শনাক্ত হয়নি

ফেনী সংবাদদাতা : সোনালী ব্যাংকের ফেনীর মহিপাল শাখায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা খাতে (এসএমই) ঋণদানে জালিয়াতির ৬ বছরেও ৫০ জন ঋণগ্রহিতাকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করতে পারেনি। এ সব ঋণের সুদে-আসলে প্রায় ৯ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে।

এই ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে ২১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ব্যাংকের মহিপাল শাখা সূত্রে জানা যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) ব্যবসা খাতে কিস্তিতে ১৬৫ জন ঋণগ্রহিতাকে ৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, এসএমই (চলতি) হিসাব খাতে ১৪ জন ঋণগ্রহিতাকে ৯০ লাখ টাকা, ক্ষুদ্র ব্যবসা (এসবিএল) খাতে ১৫ জন ঋণগ্রহিতাকে ৪৫ লাখ টাকা এবং ক্ষুদ্র ঋণখাতে ২৭ লাখ টাকাসহ মোট ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এসব ঋণগ্রহিতারা বিভিন্ন ভুয়া নাম ও নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ঋণের এই টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর- এই তিন মাসে ওই ঋণ জালিয়াতি হয়। ওই অর্থবছরে ব্যাংকের এই শাখায় এসএমই খাতে ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার কোটি টাকা। নিয়মভঙ্গ করে ও অতিরিক্ত ঋণ প্রদানের অনুমোদন না নিয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ দেওয়া হয়। ব্যাংকের তখনকার ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ঋণ জালিয়াতি হয়। তাকে অন্যত্র বদলি করার পর ২০১২ সালের মার্চ মাসে নতুন ব্যবস্থাপক মো. মোস্তফা যোগদান করেন। তখন বিষয়টি ধরা পড়ে এবং জানাজানি হয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থাপক মো. মোস্তফাকে যোগদানের দুই মাসের মধ্যে অন্যত্র বদলি করা হয়। পরবর্তীতে ইসমাইল হোসেন মজুমদার ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করে ২০১৩ সালের ৬ আগস্ট নিজে বাদী হয়ে সাবেক ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমসহ ৭৪ জন ঋণ গ্রহিতার বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আর খোঁজ নেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনা দুদকের নজরে আসার পর ওই বছরের ২৪ আগস্ট সাবেক ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমসহ ৭৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে দুদক ৫৯টি মামলা আমলে নেয়। সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের বিভিন্ন তারিখে ফেনীর অর্থঋণ আদালত ও উপজেলা সার্টিফিকেট অফিসারের কার্যালয়ে ১৫৭টি মামলা দায়ের করে। এরমধ্যে যাদের কাছে ঋণ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে ১১৬টি মামলা এবং পাঁচ লাখ টাকার নিচে থাকা ঋণের জন্য উপজেলা সার্টিফিকেট কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৪১টি মামলা রুজু করা হয়।

ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হয়নি। যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিভিন্ন ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করা হয়। এ সব ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে। ঋণ প্রদানের ছয় বছর পরও ৫০ জন ঋণগ্রহিতাকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করতে পারেনি। ব্যাংক থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে মহিপাল প্লাজায় ‘মেসার্স ওয়ানওয়ে টেলিকম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই নামে সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অপর দিকে যেসব ঋণ গ্রহিতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে, তার বড় অংশই ঋণ পরিশোধ করেনি। গত ছয় বছরে আদায় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। বর্তমানে সুদসহ প্রায় ৯ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে।

সোনালী ব্যাংক মহিপাল শাখা ব্যবস্থাপক মো. বদরুল মামুন জানান, ঋণ গ্রহিতারা ভুয়া নাম ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে বিভিন্ন কায়দায় নানা মাধ্যমে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা গেলেও এখনো ৫০টি ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সোয়া চার কোটি টাকা  খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়েছে এবং বাকি টাকা আদায়েও জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’’

সোনালী ব্যাংক ফেনী মুখ্য কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আক্তারুজ্জামান বলেন, সকল ঋণগ্রহিতাকে খুঁজে বের করে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। আদালতে দায়ের করা কিছু মামলার রায় ব্যাংকের পক্ষে হয়েছে। আদালতের বাইরেও ঋণ আদায়ের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নোয়াখালী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. তালেবুর রহমান জানান, দুদকের পক্ষ থেকে ৫৭টি মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিছু মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।



রাইজিংবিডি/ফেনী/৪ এপ্রিল ২০১৮/সৌরভ পাটোয়ারী/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়