ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৫০০ সরকারি প্রাইমারির ৭২টি ভবনই অকেজো!

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৭ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৫০০ সরকারি প্রাইমারির ৭২টি ভবনই অকেজো!

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা জেলার চার উপজেলার ৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭২টি ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ  ও পরিত্যক্ত ঘোষিত   হওয়ায় শিশুদের পড়ালেখা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

অন্যদিকে কোথাও কোথাও পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে ক্লাস নিতে বাধ্য হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবনও হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ । যে কোনো সময়েই অঘটন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।শুধু তাই নয়, কোন কোন স্কুলে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে খোলা আকাশের নীচেই ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।এসব কারণে পাঠদান কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দারুণভাবে।

মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র মতে, মাগুরা সদর উপজেলায় ১০টি, শ্রীপুর উপজেলার ২২টি, শালিখা উপজেলার ৩০টি এবং মহম্মদপুর উপজেলার ১০টি স্কুলের ভবন ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক   ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনেই পাঠদান কর্মসূচী অব্যাহত রাখা হয়েছে। আবার ছাত্রছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে কোন কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের মাঠে খোলা আকাশের নীচেই ক্লাস নিচ্ছেন।

মহম্মদপুর উপজেলার কলমধারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ২৪৯ জন। ১৯৩৫ সালে স্থাপিত এই স্কুলের ৫ কক্ষ বিশিষ্ট মূল ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৬৫ সালে। জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয় গত বছর। এখানে প্রায় এক বছর ধরেই  খোলা আকাশের নীচেই চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস । এতে শিশুদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ায় অভিভাবকরা উৎকন্ঠায় রয়েছেন ।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই সংকটের বিষয়ে আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করছি ভবন নির্মাণের ব্যাপারে দ্রুতই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

২০১৫ সালে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে মাগুরা সদর উপজেলার ভায়না গ্রামের আছিয়া খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। তবু সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে শিশুদের ক্লাস।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেফালী রাণী বিশ্বাস বলেন, ‘ভবনের ৪টি রুমের সব ক’টিতেই ছাদের পলেস্তরা ও গাঁথুনি খসে খসে পড়ছে। যে কোন সময় স্কুল ভবনটি ধসে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে”।

তিনি জানান, এ সমস্যা নিয়ে বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোন ফল পাননি। ফলে ঝুঁকি জেনেও তারা উপায়হীন।সব সময়ই ভয়ে তটস্থ থাকেন তারা।

শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। ২০১৩ সালে পরিত্যক্ত হওয়া ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান চালানো হচ্ছে প্রায় ৪ বছর ধরে। ভবনটি ১৯৯৪ সালে নির্মিত হলেও এখন ব্যবহার অযোগ্য। এ স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫৭ জন।

এখানকার একজন অভিভাবক রেখা বেগম বলেন, ‘আমরা ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকি।’

জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবন বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন বলেন,  ‘৭২টি ভবন নির্মাণের চাহিদাপত্রসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা স্কুলের জন্য ভবন বরাদ্দ হয়েছে। ঐসব স্কুলের ভবন নির্মাণ কাজ দ্রুতই শুরু হবে। আশা করছি বাকী স্কুলগুলোর জন্যও ভবন নির্মাণ নির্দেশনা দ্রুতই পাওয়া যাবে।’



রাইজিংবিডি /মাগুরা/ ১৭ জুন ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়