ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৫৭ নম্বর ডিভিশন ঢাকার পথে

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৫৭ নম্বর ডিভিশন ঢাকার পথে

ঢাকার কেন্দ্রস্থলে মিত্রবাহিনীর ট্যাংক : রশীদ তালুকদারের ছবি

শাহ মতিন টিপু : ডিসেম্বরের একেকটি দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের শক্তিও ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছিল।আর সাফল্যর পর সাফল্য আসছিল অকুতোভয় মুক্তিসেনাদের।

একাত্তরের ১০ ডিসেম্বরেই বাংলাদেশ চূড়ান্ত  বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় । চারদিকেই হানাদাররা পর্যুদস্ত। কেবল ঢাকাই বাকি। তাই ঢাকায় পরিকল্পিত চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে মিত্রবাহিনী। অকুতোভয় মিত্রবাহিনী সদর্পে চারদিক ঘেরাও করে ঢাকার সন্নিকটে চলে এসেছে একাত্তরের এইদিনে ।

এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্র স্তব্ধ করে দিল, বোমা-রকেট ছুড়ে বিধ্বস্ত করে দিল ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত, তারপরও শেষ চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে বিধ্বস্ত পাক শাসকরা।

একাত্তরের এদিন মিত্রবাহিনীর ৫৭ নম্বর ডিভিশন ঢাকার পথে নদীর বাধার মুখে পড়ে। তাই সারাদিন ধরে মেঘনা অতিক্রমের সেই অভিযান চলে। প্রথম বাহিনীটা ওপারে নেমেই ঘাঁটি গেড়ে বসল। কিছুটা উত্তরে ভৈরববাজারের কাছেই তখন পাকিস্তানি সৈন্যদের বড় একটা মজুদ। ব্রিজটার একটা অংশ ভেঙ্গে দিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে ওঁৎ পেতে বসে থাকে হানাদাররা।

ভোর হতেই তারা দেখতে পায় হেলিকপ্টারে মিত্রসেনারা নদী পার হচ্ছে, তা দেখেও হানাদাররা ঘাঁটি ছাড়তে সাহস পেল না। হেলিকপ্টারে পার হলো কিছু সৈন্য। অনেকে আবার পার হলো স্টিমার ও লঞ্চে করে। কিছু পার হলো দেশি নৌকা করে। ট্যাংকগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সেই সমস্যাও দূর হলো এক অভাবনীয় উপায়ে। এতে স্থানীয় মানুষের সাহায্যের দরকার হল।

মিত্রবাহিনী সাহায্য চাওয়া মাত্রই ছুটে আসলো হাজারো সাধারণ মানুষ। শত শত নৌকা নিয়ে এলো তারা। সে সব নৌকা বার বার মেঘনা পারাপার করল। কয়েক মাইল হেঁটে তারপর তারা পৌঁছেছিল ভৈরববাজার-ঢাকার মূল সড়কে এবং পরদিনই তারা রায়পুরা দখল করে নিল। ওদিকে তখন উত্তরের বাহিনীটাও দ্রুত এগিয়ে আসছে। ময়মনসিংহের কাছে তারা দাঁড়াল।

খবর ছিল যে, ময়মনসিংহে পাকিস্তানী বাহিনীর একটা ব্রিগেড রয়েছে, কিন্তু সে ব্রিগেডকে অনেক আগেই যে ভৈরববাজারের দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তা মিত্রবাহিনী জানত না। তাই মিত্রবাহিনী ময়মনসিংহে বড় লড়াই করার জন্য সেদিনটা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে শম্ভুগঞ্জে অপেক্ষা করল।

অন্যদিকে নৌবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনার অবস্থাও ভাল নেই। কয়েকটি স্টিমার ভর্তি হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালাতে গিয়েছিল। একটা জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়েও কিছু পাকিস্তানি সেনা সিঙ্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল। তারা ধরা পড়ল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

এদিকে বাংলাদেশের বিজয় অনিবার্য- এটা বুঝতে পেরে বাঙালীকে নেতৃত্বশূন্য করতে গোপন ষড়যন্ত্র আঁটতে শুরু করে তারা। আর একাত্তরের এইদিনে এ পরিকল্পনার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন। এদিন রাত প্রায় তিনটার দিকে  শান্তিনগরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।  সেই যে তিনি গেলেন আর ফিরে আসেননি। লাশও পাওয়া যায়নি এই শহীদ সাংবাদিকের। পাকবাহিনীর দোসর আল বদর বাহিনী সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু করে পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ডিসেম্বর ২০১৭/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়