ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৬ ফিট দেয়ালের মধ্যে ১৫ বছর!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৬ ফিট দেয়ালের মধ্যে ১৫ বছর!

দেয়াল টপকে পার হচ্ছেন গৃহবধূ আঞ্জিরা বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : এক কঠিন আবর্তে বাঁধা পড়েছে খুলনা নগরীর মুজগুন্নি দক্ষিণপাড়া এলাকার কাজী পাড়ার ছয় সদস্যের একটি পরিবার।

গত ১৫ বছর ধরে পরিবারটি আবদ্ধ হয়ে আছে ছয় ফিট দেয়ালের গন্ডিতে। দেয়াল টপকেই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে তাদের।

মাস দু’য়েক আগে বিদায় নিয়েছেন এ পরিবারের কর্তা আছর খালাসী। জীবিত অবস্থায় একা একা তিনি এই দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া করলেও মৃত্যুর পর তার নিথর দেহ বাড়ির বাইরে নিতে বড়ই উপায়হীন হয়ে পড়ে পরিবার। চার কাঁধে ভর করে পার হতে হবে ছয় ফিট সীমানা দেয়াল। তাই ক্ষণিকের জন্য দেয়াল ভাঙ্গা হলেও তা আবার পুনরায় তৈরি করে দিতে হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই আশা যাওয়া করতে হচ্ছে এ পরিবারের।

আছর খালাসী দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন একটি আটার মিলে। তিনি ১৫ বছর আগে নগরীর মুজগুন্নি দক্ষিণপাড়া এলাকার কাজী পাড়ায় একটি ডোবা কিনেছিলেন। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ডোবা ভর্তি করে বসবাসের উপযোগী করে তোলেন। যেটি তার বসতবাড়ি। টিনের ঘর তুলেছেন তিনটি। কিন্তু ঘর হলেও নেই তার ঘরের যাওয়া আসার রাস্তা। চারপাশে প্রতিবেশীদের বাড়ির সীমানা দেয়ালে আবদ্ধ তার বাড়ি। ডোবা কিনলেও কেনেননি যাতায়াতের রাস্তা। তাই ছয় ফিট দেয়ালের সীমানায় আবদ্ধ হয়ে কাটছে এ পরিবারের জীবন।

আছর খালাসীর স্ত্রী আঞ্জিরা বেগম জানান, কর্মস্থল বাড়ি থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে হওয়ায়, যাতায়াত করতেন বাইসাইকেলে। আর সেটা সব সময় ঘাড়ে করে পার করতে হত। পারাপার করতে গিয়ে কোমরে ব্যাথাও পেয়েছেন বেশ করেকবার। জীবনের শেষ মুহূর্তে অসুস্থতার কারণে কিছুদিন বিছানায় ছিলেন। সীমানা দেয়াল পারাপারের কষ্টের কারণে ভালভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেননি। এভাবেই শেষ বিদায় হয়েছে তার। বলতে গিয়ে চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে আঞ্জিরা বেগমের।

আঞ্জিরা বেগম জানান, তার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। শারিরীকভাবে তিনি নিজেও কিছুটা অসুস্থ। দীর্ঘদিন যাবত দেয়ালের দু’ পাশে ১০-১২টি ইট দিয়ে বাসা থেকে বের হন। ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে, বিয়ে দেবেন। তবে বাড়ির এমন অবস্থা দেখে ভাল পরিবারে কেউ বিয়েতে আগাচ্ছে না। বেশ কয়েকবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বিষয়টি অবগত করেছেন। তবে কেউ কোন সহযোগীতা করতে পারেনি।

প্রতিবেশীরা কেউ বলছেন, ‘আমি আমার জায়গা রাস্তার জন্য ছাড়তে পারি, যদি আমার পাশের বাড়ির লোক আমাকে অন্য পাশে জায়গা দেয়’। আবার অনেকেই বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত জায়গা ছাড়তে রাজি হলেও সবাইকে একত্রিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে এ পরিবারের আশার প্রদীপ।

আঞ্জিরা বেগম বলেন, ‘আমি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের কাছে সাহায্য চাই। তিনিই পারেন স্থানীয় লোকদের একত্রিত করে, আমার পরিবারের জন্য একটি রাস্তার ব্যবস্থা করে দিতে।’ আর সে আশাতেই চেয়ে আছে পরিবারটি।



রাইজিংবিডি/খুলনা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়