ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৬৮ বছরের পথচলায় আওয়ামী লীগ

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৬৮ বছরের পথচলায় আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের পথচলা শুরু ১৯৪৯ সালে। ২৩-২৪ জুন। পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনে বশির সাহেবের রোজ গার্ডেন বাসভবনে। তখনকার প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলীম লীগ নেতাদের উদ্যোগে রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম প্রধান বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শামসুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্মসম্পাদক।

দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে। এতে সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটে রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বহাল থাকেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকা- স্থগিত করা হয়। ছয় বছর ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ রাজনীতি করার পর ১৯৬৪ সালে দলটির কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগের নেতারাই থাকেন। ১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমেদ। এরপর ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন জিল্লুর রহমান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারও স্থগিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মিজান চৌধুরী ও মোল্লা জালালউদ্দিনকে নিয়ে নেতৃত্বের কোন্দল শুরু হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগের ঐক্যরক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করতে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।

১৯৭৮ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেক উকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রাজ্জাক। এরপরই শুরু হয় আওয়ামী লীগকে উপমহাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। দেশে রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন আবদুর রাজ্জাক। আবারও আঘাত আসে দলটির ওপর। ১৯৮৩ সালে আবদুর রাজ্জাক দল ভাঙার চেষ্টা করেন এবং বাকশাল নামে একটি দল গঠন করেন। আবদুর রাজ্জাককে এ সময়ে দল থেকে বহিষ্কার করে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

১৯৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান যথাক্রমে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের বিশেষ কাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত আবদুল জলিল দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই এবং সর্বশেষ ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দুটি কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বহাল থাকেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর সর্বশেষ ২৩ ও ২৪ অক্টোবর ২০১৬ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের নির্বাচিত হন। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ