ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘গর্ডনের সেই লাথির কথা এখনো মনে আছে’

ইয়াসিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘গর্ডনের সেই লাথির কথা এখনো মনে আছে’

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ

দীর্ঘদিন পর শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎকে হাতের নাগালে পাওয়া গেল। ব্যবসায়িক কাজ (প্যারাডাইজ গ্রুপ) নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে পরিবারকেও ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না! পরিবারের সদস্যদের এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাদ দিয়ে ওয়ালটন মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন এই ব্যাটসম্যান।

 

শুক্রবার কক্সবাজার স্টেডিয়ামে পড়ন্ত বিকেলে বিদ্যুৎ-এর মুখোমুখি রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান। জাতীয় দলের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন। জানা-অজানা অনেক তথ্য মনে করে ফিরে গেলেন পুরোনো দিনে। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য দেওয়া হলো: 

 

রাইজিংবিডি : বিদ্যুৎগতিতে বল চলে গেল মাঠের বাইরে.. মনে আছে এ লাইনটি?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : (হাসি) টিভিতে, রেডিওতে বলত। আমার শোনার তো উপায় ছিল না। আমি তো তখন ক্রিজে থাকতাম। মানুষের মুখে মুখে বেশি শুনেছি।

 

রাইজিংবিডি : এখনো মাঠে সেই জোর, সেই আবেগ, সেই ব্যাটিং স্টাইল...
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : থাকতে পারে। এভাবেই তো খেলে এসেছি সারাজীবন।

 

Biddut

 

রাইজিংবিডি : কেনিয়ার বিপক্ষে আপনার ৯৫ রানের ইনিংসের কথা মনে আছে?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  সব মনে নেই। মেরিল আন্তর্জাতিক কাপে কেনিয়ার সঙ্গে ৯৫ রান করেছিলাম সেটা মনে আছে। এই তো...।

 

রাইজিংবিডি : ৯৫ করেও কী হারিয়েছিলেন সেটা মনে থাকার কথা…
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : ওটা তো আমার হাতে নেই। কারণ কোনো মাইলফলক ছোঁয়ার ইচ্ছায় তো আর আমি কোনো ক্রিকেট খেলিনি। সেদিন হয়তো ৫ রান করলে আমি ওয়ানডের (বাংলাদেশের হয়ে) প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হতাম। তবুও অসাধারণ একটি ইনিংস ছিল। সেঞ্চুরিটা ব্যাড লাক। সুপার ব্যাটিং করেছিলাম এটাও অনেক কিছু। ক্রিকেট মাঠে ৫ রান বড় কোনো বিষয় না। এরকম অনেক হয়েছে। আফসোস করার কিছু নেই।

 

রাইজিংবিডি : প্রথম সেঞ্চুরিটি বন্ধু মেহরাব হোসেন অপি করেছিল বলে কি খুশি?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : আমি যতদিন ক্রিকেট খেলেছি ততদিন অপির সঙ্গে আমার উঠা-বসা। অবশ্যই ও সেঞ্চুরি করাতে আমি খুশি।

 

রাইজিংবিডি : কিন্তু শুনেছি অপি নাকি চাচ্ছিলেন না আপনার সেঞ্চুরিটা হোক…
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : অপির বাবার খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিটা উনার ছেলেই করুক। এ কারণেই ও চায়নি। আর এটা ও তখনও আমাকে বলেনি। একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম।

 

Biddut1

 

রাইজিংবিডি : ড্রেসিং রুমে ঢুকে নাকি একটা লাথি খেয়েছিলেন?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : আউট হওয়ার পর আমি ওরকম চিন্তা করিনি যে আমি সেঞ্চুরি মিস করেছি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সবাই ড্রেসিং রুমের সামনে আমাদের ক্রিকেটাররা সবাই দাঁড়িয়ে ছিল। তখনও জানতাম না কী হইছে! সবাই বলছিল, ‘বিদ্যুৎ ৫টা রান করতে পারলি না। প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হতে পারতি’। তখন আমার মাথায় এল আসলেই তো ৫ রান করা যেত! কী আর করা, উঠে এলাম। সিঁড়ি দিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকার সময় দেখলাম গর্ডন গ্রিনিজ (বাংলাদেশের কোচ) দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে খুব আদর করত, আমার ব্যাটিং খুব পছন্দ করত। ও কখনোই আমাকে এত কিছু শেখাত না। ব্যাটিংয়ে ভুল আছে সেগুলো শুধু ধরিয়ে দিত। এই আর কিছু না। বলত, ‘তোর মতো তুই ব্যাটিং কর’। তারপরে ড্রেসিং রুমে ঢুকলাম। সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে একটা লাথি! তাকিয়ে দেখি গর্ডন গ্রিনিজ। যেনতেন লাথি না। বুঝতেই তো পারছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার! সব কিছুতেই বাড়তি পাওয়ার থাকে। সেই লাথির কথা এখনো মনে আছে। ও সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘আর ৫ রান হলে তো সেঞ্চুরিটি হয়ে যায়’। বললাম, মাইন্ড কইরেন না। তখনও মনে হয়নি আমি কী মিস করেছি। এখনও মনে হয় না আমি কী হারিয়েছি। তারপর পরের ম্যাচে অপি সেঞ্চুরি করল। আমি ৬৮ করলাম।

 

রাইজিংবিডি : ৯৫ কি তাহলে আপনার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : না। ওটা সেরা ইনিংস বলতে পারব না। ১৯৯৯ সালে লারার নেতৃত্বে ঢাকায় এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। তিনটি ওয়ানডে খেলেছিল তারা। প্রথম ম্যাচে মাত্র ১১ রান করেছিলাম। পরবর্তী দুই ম্যাচে সুপার ব্যাটিং করি (৪৫ ও ৪৭)। মারভন ডিলন, নিক্সন ম্যাকলিন, কার্টলি অ্যামব্রোস, সারউইন ক্যামবেলকে কড়া শাসন করেছিলাম। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার টিম। লারা অধিনায়ক ছিল। সেঞ্চুরি করেছিল (১১৭)। আর বোলাররা কেউ স্লো বোলিং করত না। ফাস্ট এন্ড বাউন্স। দুই দিক সামলে এমন ব্যাটিং করেছিলাম বলে ওই দুটা আমার সেরা ইনিংস।

 

রাইজিংবিডি : এমসিসির বিপক্ষে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি, পাকিস্তানে ডাবল সেঞ্চুরির থেকে এটি বড়?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  হ্যাঁ। আমার চোখে এগুলোই বড়। কারণ ক্লাস ও টেম্পারেমেন্ট ধরে যেভাবে খেলেছি সেটা অন্য ইনিংসগুলোতে ওভাবে ছিল না।

 

রাইজিংবিডি : আপনার আর অপির সম্পর্কের কথাটা একটু শুনতে চাই…
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : অপি আর আমি দুজনই খুব ভালো বন্ধু। জাতীয় দল, ক্যাম্প, ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই একসঙ্গে খেলেছি তখন থেকেই আমরা দুজন একসঙ্গে থাকতাম। এই যে দেখেন এখানে (মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল) এসেছি, এখানেও দুজন এক রুমে উঠেছি। দুজন দুজনের সঙ্গ উপভোগ করতাম। সবাই জানত আমরা পাওয়ার হিটিং পছন্দ করতাম। কোনো চাপ আমাদের থাকত না। একদিকে আমি খানিকটা চাপে থাকলে অপি সেটা কমিয়ে দিত। আবার অপি খেলতে না পারলে ওটা আমি পুষিয়ে দিতাম। দুইজনের আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ভালো ছিল। চাপ নিতাম না। মারার বলে বোলারকে কোনো মাফ দিতাম না। দুজন ব্যাটিংয়ে থাকলে দলের চাপও কমে যেত।

 

Biddut2

 

রাইজিংবিডি : আপনারা আক্রমণাত্মক খেলতেন বলেই কি জাভেদ ওমর বেলিমকে পছন্দ করতেন না?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : এটা সবার মুখে-মুখে কথা। গোল্লা (জাভেদ ওমর) আমাদের সঙ্গে অনেক দিন খেলেছে। পছন্দ করতাম না একটু স্লো খেলত এজন্য । ও স্লো খেললে আমরা সেটা পুষিয়ে দিতাম। অসুবিধা ছিল আবার ছিল না! পরিস্থিতি অনুযায়ী অনেক কিছু নির্ভর করত। একদিক থেকে যদি ৫/৬ বল রান না হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমাকে অন্যদিক থেকে বাউন্ডারি মারতেই হত। অটোমেটিক চাপ চলে আসে। ও একটু স্লো ছিল। সেটআপ হতে একটু ভালো সময় লাগত। ৫-৬ ওভার পর ও কমফোরটেল হয়ে যেত। তখন আবার ঠিক হয়ে যেত। কিন্তু ওই ৫-৬ ওভারে আমরা সার্কেলের সুবিধা কাজে লাগাতে পারতাম না। আমি চাপটা আগে নিয়ে নিতাম পরের দিকে রিল্যাক্সে খেলার জন্য। এজন্য দলকে একটা ভালো পজিশনে দিতে পারতাম। এজন্য শুরু দিকে উঠিয়ে উঠিয়ে খেলতাম।

 

রাইজিংবিডি : ১৯৯৯ সালে মেরিল কাপে আপনার আর অপির একটা লং ইনিংস ছিল। ১৭০ রানের জুটি। মনে আছে সেটার কথা?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : মনে আছে। কিন্তু কার সঙ্গে করেছিলাম সেটা মনে নেই।

 

রাইজিংবিডি: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন..
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : হ্যাঁ মনে পড়ল। দুইজনই সুপার ব্যাটিং করেছিলাম। অপি তো মনে হয় সেঞ্চুরিও করেছিল।

 

রাইজিংবিডি : আপনি কি জানেন ১৭ বছরেও এ রেকর্ড বাংলাদেশের কোনো উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারেনি
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : বলেন কী! ১৭০ রানের জুটি এখানো ভাঙেনি!  আরে না ভেঙে গেছে। সেই কত বছর আগের কথা। সত্যিই এখনো আমাদের রেকর্ড টিকে আছে? এখনকার খেলায় তো ক্রিকেটাররা অনেক আগ্রাসন দেখায়। ভেঙে যাওয়ার কথা, উচিত ছিল। এর ওপরে এখন এত ম্যাচ খেলছে।

 

Biddut3

 

রাইজিংবিডি : আপনারা বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারালেন। ওই সময় পাকিস্তান দলে ওয়াকার ইউনুস, ওয়াসিম আকরাম, মঈন খান, সাঈদ আনোয়ার, ইনজামাম-উল-হক ছিল। আপনার কি মনে হয় আপনাদের ওই জয়ের কারণেই বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছিল? কারণ আপনারা বড় একটি দলকে তখন হারিয়েছিলেন।
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  না আমার এটা মনে হয় না। বিশ্বকাপের পর এমসিসি (মেরিলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব) বাংলাদেশে খেলতে এসেছিল। বিসিবি একাদশের হয়ে নাঈমুর রহমান দূর্জয় ভাই ১২১ রান করেছিল। বাংলাদেশের হয়ে আমি দেড়শ’র মতো (১৩৩), আমিনুল ইসলাম সেঞ্চুরি (১১৩) করেছিল। আসলে ওই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে আমরা বিশ্বকে জানাতে পারি যে আমরা বড় খেলা খেলতে পারি। এরপর সাবের ভাই (সাবের হোসেন চৌধুরী, তখনকার বোর্ড সভাপতি) টেস্ট স্ট্যাটাস আনার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। পাশাপাশি ডালমিয়াও (জগমোহন ডালমিয়া, আইসিসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান) বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।

 

রাইজিংবিডি : আপনার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আছে, আপনি নাকি কখনোই অনুশীলনে সিরিয়াস থাকতেন না। কারো কোনো কথা শুনতেন না। অভিযোগটা ঠিক?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : আমি ক্রিকেট খেলেছি শুধুমাত্র উপভোগ করার জন্য। কখনো চিন্তা করিনি যে আমার এখান থেকে আয় করতে হবে। কারণ এখান থেকে আমার আয়ের কিছু নেই। ক্রিকেটাকেই উপভোগ করতাম। আমার মতো খেলতে পছন্দ করতাম। আমাকে বলত, অনেক চাপ দিত যে ক্রিজে থেকে রান করতে। কিন্তু আমি কখনোই কারও কথা শুনিনি। কোচ, অধিনায়ক, ম্যানেজারের কথা আমি খুবই কম শুনতাম। আমার স্টাইল আমি ধরে রাখতাম। আউট হয়ে গেলে আউট। একটা পজিশনে গেলে এমনিতেই একটা ইনিংস বড় হয়ে যায়। ধরেন, আমাদের লক্ষ্য ৩০০। আমি প্রথম দশ ওভারেই যদি কিছু করতে না পারি তাহলে তো কোনোভাবেই এ রান তাড়া করতে পারব না। দশ ওভারে আমার পাওয়ার-প্লে ব্যবহার করতে হবে। ওভাবেই খেলতাম।

 

রাইজিংবিডি : আপনি অনেক রাগ-জেদ নিয়ে ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কেন?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : আসলে পিছে যেতে চাই না। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক এখন ভালো। ২০০১ সালে টেস্ট খেলার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি আহামরি খারাপ খেলিনি যে আমাকে বাইরে থাকতে হবে। আমাকে সাপোর্ট করলে ২০০৪ সালের পর আরো খেলতে পারতাম। তখনকার বোর্ডে যারা ছিলেন সবাই ঝামেলা দেখাত, আমার ফিটনেস নিয়ে কথা বলত। এগুলোর কারণেই শেষ হয়ে যাই মূলত। ফারুক (ফারুক আহমেদ) ভাই নির্বাচক কাম ম্যানেজার, সুমন ভাই (হাবিবুল বাশার) অধিনায়ক ছিল। বললাম তো, সাপোর্ট করলে আরো খেলতে পারতাম।

 

রাইজিংবিডি : জাতীয় দলে জায়গা না দিলেও ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার কথা ছিল। নিজের রাগের কারণেই তো যাননি…
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ : খুলে বলছি। তাহলে বুঝতে পারবেন। জাতীয় লিগের খেলা চলছিল কুমিল্লায়। চট্টগ্রামের বিপক্ষে আমি হানড্রেড মারলাম। আকরাম-নান্নু ভাইয়ের টিম। আমাকে কুমিল্লা থেকে সরাসরি বিকেএসপিতে ক্যাম্পে নিয়ে আসল বিসিবি। তখন দল অস্ট্রেলিয়ায় যাবে। কুমিল্লা থেকে আসলাম বিকেএসপিতে। কিন্তু বিকেএসপিতে গিয়ে শুনি যে ‘এ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবে। আমাকে সেখানে পাঠানো হবে। দীপু রায় তখন কোচ ছিল। বলা হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্যুর কর। ওখান থেকে পরবর্তীতে আবার বাংলাদেশ দলে নিয়ে আসব। আমি বললাম ‘এ’ দলে যাবে না। সরাসরি বলছিলাম, ‘জাতীয় দলে ঢোকার মতো পারফরম্যান্স আছে…‘এ’ দলে যাব কেন?’ গাড়ী নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে সরাসরি চলে আসি ঢাকায়। এরপর থেকে সবার আড়ালে চলে যাই। রাগ-জেদ সবার ওপরে তখন থেকেই।

 

 

এরপর চিন্তা করলাম জাতীয় দলে খেলেই অবসর নেব। তারপর দলের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গেলাম। সেখানে আবার গিয়ে ঝামেলা হলো। ওয়ানডে খেলার পর বলা হলো টেস্টে নিবে না। তারপর দেশে ফিরে অবসর নিয়ে নিই। ওয়ানডেতে হালকা ইনজুরি ছিল। কয়েকদিন অপেক্ষা করলেই সুস্থ হয়ে দলে খেলতে পারতাম। কিন্তু বয়স, ফিটনেস, পারফরম্যান্সের দোহাই দিয়ে ফারুক ভাই আমাকে আর নেয়নি। তবে শুনেছিলাম কোচ আমাকে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু ফারুক ভাই চায়নি। এরপর দেশে ফিরে অবসরের চিঠি বোর্ডকে দিয়ে দেই।

 

 

রাইজিংবিডি : আপনার জীবনের সঙ্গে গোপীবাগের ক্লাব ব্রাদার্সের একটা মধুর সম্পর্ক আছে। সেটা একটু শুনতে চাই
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  ব্রাদার্স আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি যতটুকু পারছি তাদের জন্য করেছি। মোহামেডান, ওয়ারি, বিমানেও খেলেছি কিন্তু ব্রাদার্স সবার থেকে আমাকে বেশি সাপোর্ট করেছে। ব্রাদার্সের মূল প্লেয়ার ছিলাম আমি। আমাকে ছাড়া তারা ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারত না। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে সব সময় ভালো করেছি। ব্রাদার্স আমার লাকি টিম ছিল। আমি ছাড়তে চাইতাম না। টাকা বড় কোনো বিষয় ছিল না। তখন তো দলবদল গরম ছিল। ওরকম কিছু চিন্তা করতাম না। ভালো খেললে জাতীয় দলে খেলব। আবাহনী-মোহামেডান বড় কিছু না।


Biddut5

 

রাইজিংবিডি : শেষদিকে চলে এসেছি। ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কেন?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  গুটিয়ে নিইনি। নারায়ণগঞ্জে আমার প্রতিষ্ঠান প্যারাডাইস গ্রুপ প্রতিনিয়ত কাজ করছে, স্পনসর করছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ক্রীড়া সংস্থায় আমি দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে সেই সুযোগটি হয়নি।

 

রাইজিংবিডি : ছেলে ইয়াসিন শাহরিয়ার আজানকে কি ক্রিকেটার বানাবেন?
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  ছেলেকে কী বানাব, তা বলতে পারব না। তবে ক্রিকেটের দিকে কোনো মন নেই! ব্যাট-বল ধরে না। চার বছর হয়েছে মাত্র। ক্রিকেটার হতেও পারে। আবার নাও পারে। আবার ব্যবসায়ীও হতে পারে। গাড়ি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। রক্তে যখন ক্রিকেট আছে তখন আসতেও পারে। তবে এতটুকু বলতে পারি ও ওর বাবার থেকে ভালো সাপোর্ট পাবে।

 

রাইজিংবিডি : বড় মেয়ে শায়রা বিনতে শাহরিয়ার অহনা নাকি গান করে? একটি গানের অ্যালবামও বের হয়েছে

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ :  মেয়ের অ্যালবাম (আবির্ভাব) আমি নিজে বের করছি। আমি আর আমার চাচা স্পনসর ছিলাম। পেশাদারিত্বের জন্য না। আমরা শখে বের করেছি শুধুমাত্র নিজেরা শোনার জন্য। গান ও অনেক শিখে, হার্ডওয়ার্ক করে। পরিবারের অনুষ্ঠান ছাড়া কোথাও পারফর্ম করে না। শখের বসে শিখা কিন্তু একটা গুড কোয়ালিটির মধ্যে চলে আসছে। সুপারস্টার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

 

 

রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়