ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আমাদের অস্তিত্বের জন্যই জরুরি

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমাদের অস্তিত্বের জন্যই জরুরি

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঢাকায় বুড়িগঙ্গা ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরে অভিযান চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। ঢাকায় প্রাথমিকভাবে বুড়িগঙ্গা তীরের ছয় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে। গত কয়েকদিনে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। নদীর তীর দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের দায়ে তিনজনকে আটক করে জরিমানাও করা হয়। চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তীরেও অভিযানে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে এক কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা।

বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে রাজধানীর চারপাশে গুরুত্বপূর্ণ চার নদী- বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ে নদীকে ‘জীবন্ত সত্ত্বা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নদী সুরক্ষায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের এ রায়ের পর বুড়িগঙ্গা-কর্ণফুলী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নদীর দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বিষয়ে কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

কর্ণফুলী নদী শুধু চট্টগ্রামের সম্পদ নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্ণফুলীর তীরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর, এজন্য নদীটিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘লাইফলাইন’ বলা হয়। দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। আর এই বন্দরের নাব্যতা, গভীরতা এবং এর সচল প্রবাহের ওপর বন্দরের কার্যক্রম অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ নদী বাঁচলে চট্টগ্রামের মানুষের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি বাঁচবে। তাই কর্ণফুলীকে বাঁচাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে শুরু হওয়া এ অভিযান সফল করতে হবে।

শুধু কর্ণফুলী নয়, এর শাখা নদীগুলোতেও একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। দখল-দূষণে প্রতিনিয়ত রূপ হারাচ্ছে কর্ণফুলী। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামের প্রধান নদী কর্ণফুলীর দৈর্ঘ্য ১৩১ কিলোমিটার। এ ছাড়া ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদী, ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ইছামতী নদী এবং ২৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সাঙ্গু নদী রয়েছে চট্টগ্রামে। কর্ণফুলীর মতো এসব নদীও দখল-দূষণে বিপর্যস্ত।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। জালের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খরস্রোতা নদী দখল-দূষণে আজ জীর্ণ-শীর্ণ অথবা মরণাপন্ন। অনেক নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে কিংবা হারিয়ে যেতে বসেছে। এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতা। দেশের নদ-নদীগুলোকে অবশ্যই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অবৈধ দখল ও দূষণ থেকে মুক্ত করে নদীর প্রাকৃতিক সচলতা রক্ষা করতে প্রশাসন কোনো ছাড় দেবে না বলে আমরা মনে করি। এটি আমাদের অস্তিত্বের জন্যই জরুরি। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখা এবং নদীতীরের স্বাভাবিক চরিত্র ফিরিয়ে আনার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।

পাশাপাশি এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পর অবৈধ স্থাপনার মালিকরা যেন নতুন করে কোনো স্থাপনা তৈরি কিংবা দখল করতে না পারে। সাধারণত: দেখা গেছে কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও তা দখল হয়ে যায়। সে রকম যেন কিছু না ঘটে সে বিষয়ে অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে নজরদারী এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়