ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আরো বই, আরো মেলা

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আরো বই, আরো মেলা

|| মুম রহমান ||

যতদূর জানি, শুধু যুক্তরাজ্যেই বছরে দেড় লক্ষাধিক বই ছাপা হয়। আর বিশ্বে শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষাতেই প্রতি বছর প্রায় চার লাখ বই ছাপা হয়। বাংলাদেশে বছরে কতো বই ছাপা হয়?

বাংলা ভাষায় কতো বই ছাপা হয় তার একটা হিসাব পাওয়া যায় একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। কারণ এদেশের বেশিরভাগ বই ছাপা হয় এই মেলা কেন্দ্র করে। সারা বছর টুকটাক কিছু বই ছাপা যে হয় না তা নয়। কিন্তু মনে প্রশ্নটা জাগে এখানেই, মানুষ তো সারা বছর বই পড়ে। মানুষ বলতে অবশ্য আমি স্রেফ দু’পেয়ে  হোমোস্যাপিয়েন্স বলছি না, সংবেদনশীল, সৃষ্টিশীল এবং পাঠকদের কথা ভেবেই এখানে ‘মানুষ’ শব্দটা বলছি। আমি এবং আমার চারপাশে বহু লোককেই দেখি সারা বছর, প্রতি মাসেই নিয়ম কিংবা অনিয়ম করে বই কেনেন। তাহলে কেন মাত্র একটি মাস কেন্দ্র করেই একটি নির্দিষ্ট জায়গাতেই বইমেলা হবে?

বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। আমাদের লেখাতেও শীত, বসন্ত, বর্ষা, শরৎ ইত্যাদি আসে নানা রূপে, আঙ্গিকে। তো ঋতুভিত্তিক বইমেলা হলে ক্ষতি কি? আমার খুব ইচ্ছা, বছরে অন্তত ছয়টা বইমেলা হবে। এবং অবশ্যই তা কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। জ্ঞান ও সৃজনশীলতা খালি ঢাকাতেই থাকবে তা নয়, দেশব্যাপী হবে। বিভিন্ন জেলায় জেলায় বিভিন্ন সময়ে বইমেলা যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। আসল ঝামেলাটা অন্য জায়গায়। মানে ধরুন, জুলাই মাসে ময়মনসিংহে একটা বইমেলা হচ্ছে, এ উপলক্ষ্যে কি কোনো প্রকাশক আলাদা করে বই ছাপছেন? ছাপা কিন্তু যায়। এই সময় ময়মনসিংহকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে, লেখক-পাঠকের কথা ভেবে কিছু বই করা কি একেবারেই অসম্ভব?

বরিশালে জীবনানন্দ বইমেলা, ময়মনসিংহে হুমায়ূন আহমেদ বইমেলা, রংপুরে সৈয়দ শামসুল হক বইমেলা, এমনকি বড় বড় লেখক, সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতেও বইমেলা হতে পারে। এ সব মেলায় তরুণ লেখকদের গবেষণা, আলোচনা কিংবা সৃষ্টিশীল নতুন বই আসতে পারে। গত বছর কলকাতায় আয়োজিত বাংলাদেশ বইমেলা উপলক্ষ্যে আমার একটি বই প্রকাশিত হলো, নন্দন চত্বরের সেই মেলায় আরো কিছু বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো। এমনটা শুধু কলকাতায় নয়, সারা দেশের বিভিন্ন মেলার ক্ষেত্রেই হতে পারে। শীতে, গরমে বইমেলা হোক। বৈশাখী মেলাতে বই যুক্ত হোক, বাণিজ্য মেলায় বইয়ের দোকান থাকুন। বইও তো আন্তর্জাতিক পণ্য।

আমাদের দেশে ঈদ সংখ্যার জন্য লেখকরা ব্যস্ত সময় কাটান। ছোট-বড় নানা পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা করে। এই লেখাগুলো পরে বই আকারে বইমেলায় ছাপা হয়। প্রকাশকরা কি ঈদ কিংবা পূজাতে বই ছাপতে পারেন না? এমন কি হতে পারে না যে, ঈদের জামা-জুতার সাথে মানুষ কিছু বইও কিনবে? এতে কিন্তু প্রকাশকরাও সুবিধা পেতেন। সারা বছরের চাপ একবারে তাদের ঘাড়ের ওপর পড়তো না। আরেকটা জিনিস, ছাপাখানার লোকেরা জানেন, নভেম্বর, ডিসেম্বরে ছাপাখানায় খুব চাপ থাকে। নানা প্রতিষ্ঠানের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, নতুন বছরের স্মারক, শুভেচ্ছা কার্ড ছাপা হয়। এই সময়টাতেই বইমেলার প্রস্তুতিও চলে। ফলে ছাপাখানা, বাঁধাইখানায় বাড়তি চাপ পড়ে। অথচ সারা বছর বই প্রকাশ হলে, মেলা হলে বোধহয় ধীরে সুস্থে আরও ভালো কিছু বই প্রকাশ করা যায়।

তারচেয়েও বড় কথা, বই তো সিজনাল দ্রব্য না। চিরকালীন যে জিনিস, তাকে কেনো কেবল একুশের বইমেলা আর বাংলা একাডেমির কানুনে আটকে রাখতে হবে। বাংলাদেশে অনেক প্রভাবশালী এবং বিত্তবান প্রকাশক আছেন। তারা একত্র হয়ে নানা অজুহাতেই বছরের নানা সময়ে বইমেলা করতে পারেন। একুশে বইমেলাতে অনেক ছোট প্রকাশকরা স্টল পান না, তারাও তো একত্র হয়ে বইমেলা করতে পারে। অন্তত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বড় কলেজগুলোতেও তো ১০-২০ জন প্রকাশক একত্র হয়ে বইমেলা করতে পারেন।

বইমেলা জাতীয়ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে হোক, বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সীমানা পেরিয়ে সে রমনায়ও আসুক। কিন্তু শুধু ২৮ দিনের বইমেলায় ৩৬৫ দিনের খোরাক হয় না। আরো বেশি দিন ধরে, নানা স্থানে বইমেলা হোক- এমন স্বপ্ন আমি দেখি। স্বপ্নটা অবাস্তব নয় ভেবেই প্রকাশকদের কাছে মিনতি করি, ‘মানুষ বই পড়ে না’ এই আপ্তবাক্য ছেড়ে মানুষের কাছে যান। কাছে গেলে মানুষ বই নিবিড় করে নেবে। একটু আগে কিংবা পরে।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাঠক নাকি ভারতে আছে। তাদের অনেক প্রদেশ, অনেক ভাষা, অনেক জনসংখ্যা। এক হিসাবে জেনেছি, ভারতীয়রা গড়ে সপ্তাহে পৌনে এগারো ঘণ্টা বই পড়ে। আমরা কি চাইলে আমাদের গড় পাঠের হার বাড়াতে পারবো না। আপনি আমি এক ঘণ্টা করে বেশি বই পড়লেও কি বই পড়ার, বই বিক্রির এবং প্রকাশনার সংখ্যাটা বাড়বে না? কিন্তু তার জন্য আমার মেলা চাই। একাধিক বইমেলা। চাই আরো বই আরো মেলা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়