ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

একজন সফল কিউরেটর বাবু’র গল্প

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একজন সফল কিউরেটর বাবু’র গল্প

আব্দুল্লাহ এম রুবেল : ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেট ভালোবাসতেন। স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হবেন, হতে পারেননি। সেভাবে বড় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলাও হয়নি তার। তবে ক্রিকেট নিয়েই আছেন তিনি। বিশ্ব ক্রিকেটে আজ যে বাংলাদেশকে দেখা যায়, সেখানেও কম অবদান নেই তার। টাইগারদের সাফল্যের গল্পে সাকিব, মুশফিক, মাশরাফিদের ভিড়ে তার খোঁজ খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে এই সাফল্যে কিছু অবদান তো তারও আছে। গল্পের পিছনের নায়ক তিনি। বলছি কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবুর কথা।

সাকিব, মাশরাফি, মুশফিকরা যে উইকেটে খেলে থাকেন সেটাই তৈরি করেন জাহিদ রেজা বাবুরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত সফল কিউরেটরের নাম জাহিদ রেজা বাবু।

যথেষ্ট ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন জাহিদ রেজা বাবুর সাথে জাতীয় দলের প্রায় সব ক্রিকেটারেরই সু-সম্পর্ক। তবে সেই সু-সম্পর্কও একটা পর্যায় পর্যন্ত। আজকের মাশরাফির আবিস্কারক হিসেবেও জাহিদ রেজার বাবুর পরিচিতি আছে। ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেও পরিচিত মুখ তিনি। মূলত ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেই নিজেকে পরিচিত করতে চেয়েছিলেন।

১৯৮৫ সালের দিকে ঢাকায় বাবুর বন্ধুরা বেশ কয়েকজন মিলে একটি ক্লাব চালাতেন। বন্ধুদের অধিকাংশই হঠাৎ করে আমেরিকা প্রবাসী হন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে উদয়াচল নামে একটি ক্লাবের এন্ট্রি করান তিনি। প্রথবার কোয়ালিফাইং করেই রানার্স-আপ হয় তার দল। সুযোগ পেয়ে যান দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে। সেই উদয়াচল ক্লাব এখনও একইভাবে চালাচ্ছেন জাহিদ রেজা বাবু। ক্লাবটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলছে। ক্লাব সংগঠক হিসেবে নিজের এলাকাকে সবসময় গুরুত্ব দিতেন জাহিদ রেজা বাবু।

দেশের বাড়ি যশোরে। আর এই অঞ্চল থেকেই যে কোন ক্রিকেটারকে ঢাকায় উঠিয়ে আনার ব্যাপারে নিজে চেষ্টা করতেন। তার উদয়াচল ক্লাবের অধিকাংশ ক্রিকেটারই খেলে খুলনা বিভাগের হয়ে। সৈয়দ রাসেল তার ক্লাব থেকেই উঠে আসা ক্রিকেটার।

ক্রীড়া সংগঠক থেকে কিউরেটর। গল্পটা একেবারে ছোট নয়। ক্রিকেটের জন্য আরও কিছু করতে মন চায় তার। সুযোগটা পেয়ে যান ১৯৯৬ সালে। সে সময় বিসিবির গ্রাউন্ডস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন আলম চৌধুরী। তার সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। এই যে মাঠের ভিতরে প্রবেশ করলেন বাবু, তাকে আর দমিয়ে রাখা যায়নি। ১৯৯৮ সালে ফতুল¬¬ায় প্রথমবারের মতো উইকেট তৈরির দায়িত্ব পান। সেখানে উইকেট তৈরি করেই সুনাম অর্জন করেন তিনি। যদিও তখন ফতুল্লা আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতি পায়নি। ২০০১ সালে এসিসির একটি কোর্স করেন তিনি। ১৫ দিনের এই কোর্সেই উইকেট তৈরির অনেক মন্ত্রই আয়ত্ব করে ফেলেন। তবে এরপর কিছুদিন এ কাজ থেকে দূরে ছিলেন।

২০০৯ সালে ঢাকা আবাহনীর মাঠ থেকে পুনরায় কাজে যোগ দেন তিনি। ২০১০ সালে তাকে কিউরেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। আর ২০১২ সাল থেকে একই সাথে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ও খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের দায়িত্ব পান। তখন থেকেই এই দু’টি ভেন্যুর দায়িত্ব পালন করছেন জাহিদ রেজা বাবু।

মাঠে দল জয় পেলে ক্রিকেটারেরই অবদান আর খারাপ করলে কিউরেটরের দোষ, এটা অবধারিত সত্য। প্রায় সব মাঠকর্মী এটা জেনেই কাজটি করে থাকেন। তারপরেও এত কাজ থাকতে কিউরেটর কেন? হেসে উত্তর দিলেন, ক্রিকেটকে ভালোবেসেই। বলেন, কাজটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। একদম পুরোপুরি থ্যাংঙ্কলেস জব। থ্যাংঙ্কলেস জব হলে, বিপিএলে চট্টগ্রামের খেলার পরে এত প্রশংসা পেলেন, সেটা কি? জানান, সেটা আপনি করছেন, সাধারণ জনগন করছে। তবু আক্ষেপ নেই, আছে আত্মতৃপ্তি। বিপিএলে তিনটি ভেন্যুতে খেলা হয়েছে এবার। নিজেদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা থাকে। সেখানে ভালো করতে পারলে তো অবশ্যই ভালো লাগে।
তবে জাহিদ রেজা বাবুর প্রাপ্তিও একেবারে কম না। নিজের সবথেকে বড় প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। যদিও সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হারতে হয় টাইগারদের। তবুও ম্যাচ শেষে টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম আমার নাম ধরে কাজের প্রশংসা করেছেন। এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।



রাইজিংবিডি/খুলনা/২৯ জানুয়ারি ২০১৮/রুবেল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়