ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘রওশনের বিরুদ্ধে স্লোগান, এরিককে নিয়ে প্রশ্ন তোলে কীভাবে?’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘রওশনের বিরুদ্ধে স্লোগান, এরিককে নিয়ে প্রশ্ন তোলে কীভাবে?’

জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ শ্লোগান ও বিক্ষোভে জড়িত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী।

রোববার দুপুরে এইচ এম এরশাদের বনানী অফিসে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের এক যৌথসভায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্টির নেতা-কর্মী হয়ে কিভাবে পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। কি কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, জানতে চাই।

পার্টির চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে চিশতী আরো বলেন, রওশন এরশাদ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাই শুধু নন, বরং তিনি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মীনী। কিন্তু কিভাবে পার্টির বনানী অফিসে দলের উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ শ্লোগান দেয়, কিভাবে মিছিল করে?

শুধু তাই নয়, বিরোধীনেতার ছবি দিয়ে রংপুরে কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিল। কার ইন্ধনে তারা এসব অপকর্ম করে? জড়িতদের বিরুদ্ধে এতদিনেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না আমি জানতে চাই।

তিনি বলেন, এসব উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় অপকর্মে জড়িতরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আজ এরশাদের ছেলে এরিকের জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তিনি দ্রুত এসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত পুর্বক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

বিদিশার বিহিত চান কাজী মামুন

এরিক ও তার মা বিদিশা এরশাদ প্রসঙ্গে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে যৌথসভায় অভিমত দিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ।

উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পার্টির চেয়ারম্যানের ছেলে এরিক এরশাদ ও বিদিশাকে নিয়ে যা লেখালেখি হচ্ছে তাতে আমরা নেতা-কর্মীরা বিব্রত। এসব কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান ক্লিন ইমেজের অধিকারী। দেশের মানুষ তাকে ভালো মানুষ ও ভালো রাজনীতিবিদ হিসেবে জানেন। এরিক ও বিদিশার কর্মকাণ্ড নিয়ে যা হচ্ছে তা আমাদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যায় না। তাতে আমাদের চেয়ারম্যানকেও বিতর্কিত করা হচ্ছে।

এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি জানতে চাই, কী কারণে দলের সিনিয়র নেতারা এরিককে দেখতে গেলেন না। আপনারা গিয়ে বিদিশার সঙ্গেও কথা বলতে পারতেন। চাইলে এ ব্যাপারটি শেষ করা যেত। কিন্তু কেউ করেননি। আমি এরিক ও বিদিশার বিহিত চাই।’

যৌথসভায় সাংগঠনিক অনিয়ম তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাজী মামুন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়াকে ইঙ্গিত করে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ৩০ নভেম্বর আমার জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ দিয়েছিলেন। আমরা সম্মেলন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। পোস্টার ব্যানার সবকিছু লাগানো হয়। হল বুকিংসহ সব আয়োজন সম্পন্ন করার পর হঠাৎ করে আপনারা সম্মেলন স্থগিত করে দিলেন।

‘আমি জানতে চাই কার কারণে এই সম্মেলন স্থগিত করা হলো। এভাবে কী পার্টি চলবে? মহাসচিব, আপনি বলেছিলেন বেঁচে থাকলে আপনি সম্মেলনে যাবেন, কিন্তু আপনিও যাননি। কেন যাননি জানতে চাই। প্রশ্ন তোলেন মামুন।’

শুধু তাই নয় যৌথসভায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত না করা এবং পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম স্মরণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

কাজী মামুনের বক্তব্য মনযোগ দিয়ে শুনলেও সভায় পার্টির চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি। বরং কাজী মামুনের মুখে জেলা সম্মেলন স্থগিত করার কথা শুনে হতবাক হন উপস্থিত দলের মহাসচিব।

এ সময় রাঙ্গা বলেন, ‘দলের মহাসচিব হিসেবে সম্মেলন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি আমার জানার কথা, কিন্তু বিষয়টি আমি জানিই না। যেকোনো কারণে সম্মেলন স্থগিত হতেই পারে কিন্তু সেটা মহাসচিবের জানার রাইট রয়েছে। এভাবে সংগঠন চলতে পারে না।’ মহাসচিবও এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

যৌথসভায় কাজী মামুনের মত সাংগঠনিক অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

পার্টির চেয়ারম্যানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ৮২ সাল থেকে আমি জাতীয় পার্টিতে। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে অপরিচিত একজনকে বসানোর চেষ্টা চলছে। নেতাকর্মী কেউ উনাকে চিনে না। শুধুমাত্র আমাদের এক নেতার নিকটাত্মীয় বলে তাকে সভাপতি করা চেষ্টা করা হয়।

এভাবে এভাবে অপকর্ম করা হলে পার্টি কিভাবে সুসংগঠিত হবে। তিনি এ ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

চুন্নুর বক্তব্যের জবাবে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমি বিষয়টি দেখবো এবং সবাইকে নিয়ে দল পরিচালনা করতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার। আমরা সবাই একসঙ্গে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে চাই।

দিলারার কান্না

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘনিষ্ঠ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার দীর্ঘদিন পর যৌথসভায় উপস্থিত হয়ে এরশাদকে স্মরণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে হাওমাও কারে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নেতাদের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার দিলারা বলেন, আমি দীর্ঘদিন দলীয় কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত। পার্টির চেয়ারম্যানকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছি। আমার মন এখনো ভালো নেই। এজন্য দীর্ঘদিন আসতে পারিনি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। স্যারের জন্যও দোয়া করবেন।


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাহি/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়