ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সোনাগাজী থানার প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার এ পুলিশ কর্মকর্তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ৩০ জুন এ মামলায় চার্জ গঠনের শুনানির দিন ঠিক করেন এবং ওই দিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার আদেশ দেওয়া হয়।

সোমবার দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রিজন ভ্যানে করে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে হাজির করে পুলিশ। ওই সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতির কারণে তাকে প্রিজন ভ্যান থেকে না নামিয়ে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেয় পুলিশ।

পরে বেলা ২টার দিকে সিএমএম কোর্টের হাজতখানা থেকে আবার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে প্রিজন ভ্যানে করে আনা হয়। এরপর তাকে হাতকড়া ছাড়াই প্রিজন ভ্যান থেকে নামিয়ে লিফটে করে মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনের ৬ তলায় অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। তখন প্রায় ২টা ২০ মিনিট। প্রিজন ভ্যান থেকে আদালতে ওঠানোর সময় প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা ছবি তুলতে ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এতে অনেক সাংবাদিক আহতও হন। মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে ওঠানোর পর তিনি কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন তার চোখে সানগ্লাস, মুখে দাড়ি, পরণে প্যান্ট এবং গায়ে পোলো শার্ট ছিল। তাকে কিছুটা বিচলিত দেখাচ্ছিল। ট্রাইব্যুনালের ভেতরেও পুলিশ তাকে ঘিরে ছিল।

বিচারক আগে থেকে এজলাসে ছিলেন। তাই মোয়াজ্জেম হোসেনকে কাঠগড়ায় ওঠানোর দুই মিনিট পরই এ মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথমে আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন আসামিকে কাঠগড়ায় উঠতে বললে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়ান।

এরপর শুনানিতে মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন প্রথমে বলেন, বিজ্ঞ আদালত ২০ দিন আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামি একজন আইনের রক্ষক। তিনি যদি নির্দোষ হতেন, তবে আইনের লোক হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি, পালিয়ে ছিলেন। বিজ্ঞ আদালত এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নেন, তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত দেবেন।


এরপর রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, আসামি পলাতক ছিলেন। আইনের লোক হয়েও আদালতে আসেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। জামিন পেলে পলাতক হবেন।

এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ জামিনের আবেদন করে বলেন, উনি (ওসি মোয়াজ্জেম) পলাতক ছিলেন না। তিনি আইনের আশ্রয়ের জন্য হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। রোববার আত্মসমর্পণের জন্যই তিনি হাইকোর্টে যান। সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। যদিও পুলিশ তা স্বীকার করেনি। বলছে, শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলার অভিযোগ সম্পর্কে এ আইনজীবী বলেন, মামলায় বলা হয়েছে, তার (ওসি মোয়াজ্জেম) আইডি থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তার আইডি থেকে ভিডিও ছড়ানো হয়নি। ছড়ানো হয়েছে মো. আতিয়ার হাওলাদার সজল নামে এক সাংবাদিকের আইডি থেকে। অথচ তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি, যা রহস্যজনক। বরং সজলের আইডি থেকে ভিডিও ছড়ানোর কথা জানতে পেরে তিনি গত ১৪ এপ্রিল থানায় একটি জিডি করেন। তাই মোয়াজ্জেম হোসেন এ মামলায় আসামি হতে পারেন না। তিনি জামিন পেতে পারেন। ওই সময় বিচারক আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন যে, মোয়াজ্জেম হোসেন ভিডিওটি করেছিলেন কি না? এ প্রশ্নের বিষয়ে আইনজীবী সরাসরি কোনো জবাব দেননি।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে ফেসবুকে লাইভকারী আলোচিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ১৫ এপ্রিল আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় গত ২৭ মে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই দিনই মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর রোববার বিকেল ৩টার দিকে হাইকোর্টের সামনে থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৯/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়