ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কবিতার বরপুত্র’র জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কবিতার বরপুত্র’র জন্মদিন

দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।/পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ,/ লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।/ দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। (তুমি বলেছিলে)

এ লাইন ক’টি পড়লেই মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যপট খুব সহজেই চোখের সামনে এসে যায়। কবি শামসুর রাহমানকে বলা হয় স্বাধীনতার কবি। এই স্বাধীনতার কবি’র ৯১তম জন্মদিন আজ। কবির জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলিতে। তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক, গীতিকার ও কলামিষ্ট। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে তিনি বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রাখেন।

‘তুমি বলেছিলে’ শিরোনামের কবিতাটিতে তিনি লেখেন-

বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি।/পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,/ মানচিত্র, পুরনো দলিল।/মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দে/সাধের আশ্রয় ত্যাগী হয়/মৌমাছির ঝাঁক,/তেমনি সবাই/পালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্বিদিক। নবজাতককে/বুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননী/বনপোড়া হরিণীর মত যাচ্ছে ছুটে।

কবির ‘স্বাধীনতা তুমি’ শিরোনামের কবিতাটি পড়েনি বাংলা ভাষার এমন পাঠক বিরল।

স্বাধীনতা তুমি/রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।/স্বাধীনতা তুমি/কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-/স্বাধীনতা তুমি/শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা/স্বাধীনতা তুমি/পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।

জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মতই বুকের ভেতর স্পন্দ তোলে ‘স্বাধীনতা তুমি’।

শামসুর রাহমান ছিলেন জনতার কবি। বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। দেশের ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, কোন অনাচার হতে দেখলে নিজেকে একাত্ম করে নিতেন এবং তার জবাব দিতেন কবিতার ভাষায়। আশা, বেদনা, ভালোবাসা, দ্রোহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি তার কবিতা থেকে।

তাকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র। আক্ষরিক অর্থে তিনি বাংলা সাহিত্যের নাগরিক-কবি। বাংলা কাব্যে সর্বসময় তিনি ছিলেন নাগরিকতার ধারক। তার প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এর পর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘রুদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া শিশুতোষ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখন্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।

সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশের পদক, কলকাতা থেকে আনন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

কবির জন্মদিনে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ এবং শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ-এর যৌথ উদ্যোগে আজ বিকেল ৫ টায় একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে আলোচনা, নিবেদিত কবিতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন- বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

 

ঢাকা/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়