ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জিএম কাদেরের মানববন্ধন ফ্লপ!

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিএম কাদেরের মানববন্ধন ফ্লপ!

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন: ডেঙ্গু ইস্যুতে রাজপথে নেমেছিল জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি। কিন্তু হাতেগোনা নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে শেষ হয়েছে দলের এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। মানববন্ধনে দেখা যায়নি দলের সিনিয়র নেতাদের। কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই হতাশাজনক। মাঠ পর্যায়ে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে এত কম লোকসমাগম হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানারকম কানাঘুষাও। জিএম কাদেরের মাঠ পর্যায়ের মানববন্ধন কর্মসূচি ফ্লপ হয়েছে বলেও সমালোচনা করছেন নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘এত কম নেতা-কর্মী নিয়ে মানববন্ধন করলে সমালোচনা তো হবেই। ২০১৫ সালে প্রেসক্লাবে পার্টির চেয়ারম্যান মানববন্ধন করেছিলেন, সেই কর্মসূচি তুলনা করলে এই কর্মসূচি সুপার ফ্লপই তো বলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘তড়িঘড়ি করে না করে একটু সময় নিয়ে এই কর্মসূচি করা উচিত ছিল। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মসূচি করলে মানবন্ধন সফল হতো।’

এরশাদপন্থি হিসেবে পরিচিত দলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ‘দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের এখনো ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি জিএম কাদের। কিছু বিতর্কিত লোকের বুদ্ধিতে তিনি পার্টি চালাচ্ছেন। পার্টির কর্মসূচিও দিচ্ছেন তারা। এতে জিএম কাদের যেমন ডুবছেন, তেমনি জাপাকেও ডোবাচ্ছেন।

ডেঙ্গু ইস্যুতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে মানবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা ও দলের হাতেগোনা নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। নেতা-কর্মীর ‍উপস্থিতি সবমিলে হাজারের কোটা পুরণ হয়নি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও ছিল নগন্য।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জিএম কাদেরের মানববন্ধনে রওশনপন্থি নেতা-কর্মীদের কাউকে দেখা যায়নি। ছিলেন না সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার অনুসারীরাও। মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি জহিরুল আলম রুবেল ও উত্তরের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম সেন্টু উপস্থিত থাকলেও দুই সিটির অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি।

শুধু তাই নয়, জিএম কাদেরের অনুসারী বলে পরিচিত দলের এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে আসেননি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, কাজী মামুন, তাজ রহমান, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, ‍যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয়সহ উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মীরা। মানববন্ধনে ঢাকা-৬ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ ও তার নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদেরও দেখা যায়নি। রুহুল আমিন হাওলাদারের মত দলের মহাসচিব হলেও মসিউর রহমান রাঙ্গার নিজস্ব কোন নেতা-কর্মী মানববন্ধনে আসেননি। যে কারণে জাপার মাঠ পর্যায়ের এই কর্মসূচি ফ্লপ হয়েছে বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে কথা বলতে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার মুঠোফোনে কল করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

জাতীয় পার্টির নেতাদের অভিযোগ, মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়ে জিএম কাদের দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেননি। যে কারণে মানবন্ধন কর্মসূচি ফ্লপ হয়েছে। আগে দলের প্রতিটি প্রোগ্রামেই সাবেক মহাসচিব এবি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ দলের নেতারা লোকজন নিয়ে আসতেন। বিশেষ করে দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার লোকজন শোডাউন করে জাপার প্রায়ই কর্মসূচি সফল করতেন। এবার সেটা দেখা যায়নি। এমপি বাবলা বিদেশে আর তার অনুসারী নেতাকর্মীরা আসেননি কর্মসূচিতে। এ কারণে মানববন্ধন কর্মসূচি ফ্লপ হয়েছে।

ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ আসনের এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ, জাপা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যোগ দিলেই জাতীয় পার্টির এই মানববন্ধন কর্মসূচি সফল হতো। নেতা-কর্মীদের অনুপস্থিতিতে দলের ভাবমূর্তি এভাবে ক্ষুন্ন হতো না বলেও মনে করেন মাঠ পর্যায়ের নেতারা।

এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক ও এমপি বাবলার একান্ত সচিব সুজন দে ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেন, ‘কর্মসূচি ফ্লপ বলা যাবে না। আমরা একদিনের নোটিশে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। শেখ মাসুকের নেতৃত্বে আমাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে নেতাকর্মী কর্মসূচিতে গেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগরীর এক নেতা জানান, জাপায় বড় বড় নেতা রয়েছেন কিন্তু তাদের নিজস্ব কোন কর্মীবাহিনী নেই। ওয়ান ম্যান শো। তারা বড় বড় কথা বলেন। আর যাদের কর্মী বাহিনী রয়েছে তাদের দলে মূল্যায়ন করা হয় না।

জিএম কাদের ও মসিউর রহমান রাঙ্গা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এমরান হোসেন মিয়া, নাজমা আক্তার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, উপদেষ্টা ড. নূরুল আজহার, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সরদার শাহজাহান, হেনা খান পন্নী, জহিরুল আলম রুবেল, যুগ্ম-মহাসচিব শেখ আলমগীর হোসেন, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, সুলতান আহমদে সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ-ই-আজম, ইসহাক ভুইয়া, ফকরুল আহসান শাহজাদা, নির্মল দাস, একেএম আসরাফুজ্জামান খান, সুলতান মাহমুদ, খোরশেদ আলম খুশু, বেলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট লাকী বেগম, শারমিন পারভীন লিজা, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহীন, হুমায়ুন খান, হাজী সালাউদ্দিন খোকা, সৈয়দা পারভীন তারেক, ডা. সেলিমা খান, এমএ রাজ্জাক খান, আব্দুল আজিজ, মোস্তফা কামাল, এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, আবু সাঈদ স্বপন, মিজানুর রহমান মিরু, সামছুল হুদা, মাসুদুর রহমান চৌধুরী, এনাম জয়নাল আবেদীন, ডা. সৈয়দ আবুল কাশেম, নাজমুল খান, এডভোকেট আবু তৈয়ব, দেলোয়ার হোসেন খান মিলন, সোলায়মান সামি, ফারুক শেঠ, মাসুদুর রহমান মাসুম, মাহবুবুর রহমান খসরু, এমএ সোবহান, নজরুল ইসলাম, মোমেনা বেগম, প্রিয়াংকা, আবু নাসের বাদল, মো. দ্বীন ইসলাম শেখ, মোক্তার হোসেন, আবুল কাসেম, হেলাল খান, জামাল উদ্দিন, ফয়সাল দিদার দিপু, কবির হোসেন, গাজী এমএ ছালাম, শহিদ হোসেন সেন্টু, আরিফুল ইসলাম রুবেল, মোহাম্মদ উল্লাহ, নয়নপাল, সামশেদ তাবরেজ, মনিরখান, ড. আলফাজ, ইদি আমীন এ্যাপোলো, নুরুজ্জামান, শেখ মোহাম্মদ শান্ত, আব্দুল লতিফ, শাহ ইমরান রিপন, জোবায়ের আহমেদ।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ আগস্ট ২০১৯/নঈমুদ্দীন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়