ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জীবন যেখানে শুঁটকিময়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২১ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবন যেখানে শুঁটকিময়

ছবি: ফয়ছাল উদ্দিন নিরব

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : যেদিকে চোখ যায় শুধুই শুঁটকি মাছ। লইট্যা শুঁটকি, চিংড়ি শুঁটকি, চেউয়া শুঁটকি, ভুষি শুঁটকি-কোন মাছের শুঁটকি নেই সেখানে? সামুদ্রিক সব ধরনের মাছের শুঁটকির সমাহার। যে কারণে বাতাসে শুঁটকির গন্ধ সারাক্ষণ লেগেইে আছে।

কেউ সাগর থেকে সদ্য ধরে আনা মাছ সৈকতে রাখছেন, রোদে শুকাতে খোলা মাঠে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউ ছড়িয়ে থাকা মাছগুলো গুছিয়ে স্তূপ করছেন- এমন দৃশ্যপট নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা মোহাম্মদ আলী স্লুইসঘাট এলাকার।

মুরাদ মিয়া (৬০) এই ঘাটে দুই বছর হলো শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি জেলেদের থেকে ছুরি ও বাঁশপাতা মাছ মণপ্রতি ১২০০-১৪০০ টাকায় কিনে নেন। শুকিয়ে শুঁটকি করার পর প্রতি মণ মাছের শুঁটকি পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করেন। নোয়াখালী সদর থেকে ব্যবসায়ীরা শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। মুরাদ মিয়া জানান, এই মাছের শুঁটকি করতে কাঁচা মাছ চার দিন রোদে শুকাতে হয়।

কাউছার উদ্দিন (২৮)। তিনি আট বছর ধরে শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি শুধু লইট্যা মাছের শুঁটকি করে থাকেন। কাউছার উদ্দিন জেলেদের থেকে লইট্যা মাছ ২৫০ টাকায় কিনে নেন। শুকিয়ে মাছ শুঁটকি করার পর প্রতি মণ ১৪০০ টাকা বিক্রি করেন। মাছের ফিড তৈরি করার জন্য বাজারে লইট্যা ও ভুষি মাছের শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে।

কাউছার উদ্দিনের সহযোগী হিসেবে ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। তারা সারা দিন শুঁটকি শুকাতে ব্যস্ত থাকেন। রাত্রী যাপন করেন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে তৈরি শুঁটকি মাছের অস্থায়ী গুদামে। কাউছার উদ্দিন জানান, তিনি প্রতিবছর গড়ে ৭০০ মণ লইট্যা শুঁটকি উৎপাদন করেন। ময়মনসিংহের কিছু ব্যবসায়ী তার শুঁটকির প্রধান গ্রাহক। শুঁটকি থেকে প্রতিবছর তার আয় হয় কয়েক লাখ টাকা।

শুধু মুরাদ মিয়া ও কাউছার উদ্দিন নয়, মোহাম্মদ আলী স্লুইসঘাটে শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী ও সহস্রাধিক শ্রমিক। এই ঘাটে প্রায় ২০ প্রকারের ‍শুঁটকি উৎপাদন হয়। শুঁটকিগুলো ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিদেশেও রপ্তানি হয়।

অগ্রহায়ণ-পৌষ ও মাঘ-ফাল্গুন সাধারণত শুঁটকি উৎপাদনের সময়। বছরের বাকি সময় উৎপাদন হলেও তা পরিমাণে অনেক কম। হাতিয়া উপজেলায় মোহাম্মদ আলী স্লুইসঘাট ছাড়াও কাদেরিয়া ঘাট, বুড়ির ধোনা, রহমত ঘাট ও নিঝুমদ্বীপ শুঁটকির জন্য বিখ্যাত।

যেভাবে শুঁটকি তৈরি করা হয় : সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে তাজা মাছ সহজেই পচে যায়। খাদ্য সংরক্ষণের প্রাচীন পদ্ধতি হলো খাদ্য শুকানো। প্রথমে মাছ রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয় পানি অপসারণের জন্য। কারণ পানির কারণেই বিভিন্ন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীব বেঁচে থাকে এবং মাছ পচতে সহায়তা করে। খোলা জায়গায় বাতাস এবং রোদ ব্যবহার করে মাছ শুকানোর প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।

শুকনো মাছ কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে। এই পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ, কমদামি এবং কার্যকর অনুকূল আবহাওয়ায়। জেলে বা জেলে পরিবারের সদস্যরাই এই কাজ করে। তবে এখন উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার মণ শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে।

 

চিকিৎসকদের মতে, টাটকা মাছের চেয়ে শুঁটকি মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি। তাই স্বাস্থ্যগুণ, স্বাদ বিবেচনায় দেশে-বিদেশে শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ/তারা/এএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়