ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঢাকার আশপাশে বেড়ানোর জায়গা

গাজী মুনছুর আজিজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাকার আশপাশে বেড়ানোর জায়গা

গাজী মুনছুর আজিজ: ঢাকার আশপাশে দর্শনীয় অনেক স্থান আছে। চাইলে এবারের শীত মৌসুমে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কিংবা বন্ধুসহ ঘুরে আসতে পারেন এসব দর্শনীয় স্থান থেকে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক: গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ৩ হাজার ৬৯০ একর আয়তনের এ পার্কে আছে- বাঘ, সিংহ, হাতি, ভাল্লুক, হরিণ, কুমির, বানর, খরগোশ, জিরাফ, অজগর সাপ, নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। এ পার্কের বাঘ রেস্তোরাঁয় বসে খুব কাছ থেকে দেখা যাবে বাঘের বিচরণ। রেস্তোরাঁর চারপাশটা সাদা কাচের দেয়ালে ঘেরা। বাঘের রেস্তোরাঁর মতো সিংহ রেস্তোরাঁও আছে। এটিও মূলত সিংহ পর্যবেক্ষণ রেস্তোরাঁ। পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো বিশেষ গাড়িতে বনের ভেতর বেড়ানো। গাড়িতে করে বেড়ানোর সময় খুব কাছ থেকেই দেখা যাবে বাঘ, সিংহ, হরিণ বা অন্য প্রাণীর বিচরণ। আরও আছে কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র, হাঁসের লেক, বিভিন্ন পাখিশালা, প্রজাপতির পার্কসহ নানা বন্যপ্রাণী।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। একসময় এ এলাকার নাম ছিলো সুবর্ণগ্রাম। ফাউন্ডেশনের ভিতরে দুটি জাদুঘর আছে। একটির নাম- লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, অন্যটি শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে গ্যালারি আছে ১১টি। এসব গ্যালারিতে দেখা যাবে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নিপুণ কাঠখোদাই শিল্প, আবহমান বাংলার গ্রামীণ জীবনচিত্র, বাংলার পটচিত্র ও মুখোশ শিল্প, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নৌকার মডেল, বাংলাদেশের উপজাতীয়দের জীবনচিত্র, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা, কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্র, লোকজ অলঙ্কার, বাঁশ, বেত ও শীতল পাটির নিদর্শন এবং আদি আমলের মুদ্রা, গহনা ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন নিদর্শন।
 


লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর দেখতে হলে যেতে পারেন শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে। দুটি জাদুঘরই পাশাপাশি। শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে গ্যালারি আছে দুটি। নিচতলায় এক নম্বর গ্যালারিতে দেখতে পাবেন নিপুণ কাঠখোদাইয়ে তৈরি প্রাচীন ও আধুনিককালের বিভিন্ন নিদর্শন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে কাঠ থেকে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি ও বিক্রির সামগ্রিম ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এখানে। জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে জামদানি এবং নকশিকাঁথার বিভিন্ন মোটিফ ও বিভিন্ন রঙের এবং নকশার জামদানি শাড়ি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্রময় নকশিকাঁথার বুননও দেখতে পাবেন এখানে। জাদুঘর দেখে একটু সামনে এগুলেই বাঁশের সাঁকো। সাঁকো পার হলেই দীঘি। দীঘির ঘাটে নৌকা বাঁধা। একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো নৌকা। নৌকায় করে ঘুরে দেখতে পারবেন। ফাউন্ডেশনের আঙিনায় শেখ রাসেল কর্ণারে প্রতি মাসের শেষ শুক্রবার সকাল ১০টায় শিশুদের ছবি আঁকার আসর বসে। আর লালন কর্ণারে বিকাল তিনটায় বসে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও শিক্ষার আসর। চাইলে সেখানে অংশ নিতে পারেন। এছাড়া ফাউন্ডেশন আঙিনায় স্থায়ী কারুশিল্প গ্রাম আছে। সে গ্রামে দেখতে পাবেন জামদানি কাপড় বোনা বা বিভিন্ন লোকজ পণ্য তৈরির দৃশ্য। 

পানাম নগর : হাজার বছরের পুরনো শহর পানাম নগরী। লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে এ নগরী। এখানকার প্রতিটি ভবনই নান্দনিক কারুকাজে তৈরি। বর্তমানে নগরের উত্তর পাশে ৩১টি ও দক্ষিণ পাশে ২১টি ভবন রয়েছে। এছাড়াও দেখে আসতে পারেন গোয়ালদি মসজিদ, শায়খ শরফুদ্দীন তাওয়ামার সমাধি, গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সমাধি, পাঁচ পীরের সমাধি। এ সবই রয়েছে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আশপাশে।
 


বিক্রমপুর জাদুঘর : সবুজ গাছগাছালিতে ঢাকা চারপাশ। তার মাঝে বিশাল পুকুর। শানবাঁধানো ঘাটও আছে। আরও আছে সাম্পান নৌকা। পুকুরপাড়ে অনেকগুলো পুরাতন বাড়ি। এর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। এছাড়া পুকুরে যে সাম্পান ভাসানো- এটা নৌকা জাদুঘরের প্রতীকী। আর এ জাদুঘরগুলো মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার উত্তর বালাসুর গ্রামে অবস্থিত। তিনতলা ভবনের এ জাদুঘরে প্রবেশ করলেই দু’পাশে দেখা যাবে দুটি বড় মাটির পাতিল। নিচতলার বাম পাশের গ্যালারিটি যদুনাথ রায়ের নামে। এ গ্যালারিতে বিক্রমপুরের প্রাচীন মানচিত্র, রঘুরামপুর, নাটেশ্বরসহ বিক্রমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া পোড়া মাটির নল, মাটিরপাত্র, পোড়া মাটির খেলনাসহ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। নিচতলার ডান পাশের গ্যালারিটি স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর নামে। এ গ্যালারিতে আছে ব্যাসাল্ট পাথরের বাটি, গামলা, পাথরের থালা, পোড়া মাটির ইট, টালি, বিক্রমপুরের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার ছবিসহ বিভিন্ন নিদর্শন। দ্বিতীয় তলার বাম পাশের মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে দেখা যাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ইতিহাস, দলিল, বই ও বিভিন্ন নমুনা। আর ডান পাশের গ্যালারিতে রয়েছে বিক্রমপুরে জন্ম নেয়া মনীষীদের জীবন ও কর্মের বৃত্তান্ত। আরও আছে কাগজ আবিষ্কারের আগে প্রাচীন আমলে যে ভূর্জ গাছের বাকলে লেখা হতো সেই ভূর্জ গাছের বাকল, তালপাতায় লেখা পুথি, কাঠের সিন্দুক, পাকিস্তান আমলের মুদ্রা, তাঁতের চরকা, পোড়া মাটির মূর্তি, সিরামিকের থালাসহ প্রাচীন আমলে স্থানীয় মানুষদের ব্যবহার্য বিভিন্ন নিদর্শন।
 


শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুঘর ও প্রত্নতাত্ত্বি নিদর্শন: ঢাকা থেকে প্রায় ৯৬ কিলোমটার দূরে কুমিল্লায় অবস্থিত শালবন বিহার। বর্গাকার এ বৌদ্ধ বিহারের ৪টি বাহুতে সর্বমোট ১১৫ টি ভিক্ষু কক্ষ ছাড়াও বিহারাঙ্গনে রয়েছে ক্রুশাকার কেন্দ্রীয় মন্দির। মন্দিরের দেয়াল পোড়ামাটির ফলক চিত্র দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এ প্রত্নকেন্দ্রে ৬টি নির্মাণ যুগের সন্ধান পাওয়া যায় এবং প্রথম নির্মাণ যুগ ষষ্ঠ শতক এবং শেষ নির্মাণ যুগ ১২শ শতক বলে প্রত্মতাত্ত্বিকগণ মনে করেন। বিহারের উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে বিহারের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ১টি মাত্র প্রবেশ পথ এবং প্রবেশ পথের বাইরে উত্তর পশ্চিম পাশে আরও ১টি ছোট আকারের মন্দির পরিলক্ষিত হয় যা বিহারের সমসাময়িক কালে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।

শালবান বিহারের আশপাশে আরও আছে রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, ভোজ রাজার বাড়ি, আনন্দ বিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রাণী ময়নামতির প্রাসাদ ও মন্দির।

ময়নামতি জাদুঘর : পুরাবস্তু সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা কোটবাড়ির শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী করে স্থাপন করা হয় ময়নামতি জাদুঘর। পুরো জাদুঘর ভবনে মোট ৪২টি অধ্যায় আছে। যাতে পুরাবস্তু সমূহ প্রদর্শিত হচ্ছে। এখানে প্রদর্শিত নমুনার মধ্যে আছে ধ্বংসাবশেষের ভূমি-নকশা, ধাতুলিপি ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, মৃন্ময় মুদ্রক, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জ মূর্তি, পাথরের মূর্তি, লোহার পেরেক, পাথরের গুটিকা, অলঙ্কারের অংশ এবং ঘরে ব্যবহৃত মাটির হাড়ি-পাতিলসহ ইত্যাদি।
 


জাদুঘরে আছে ব্রোঞ্জের তৈরি বিশালাকায় একটি ঘণ্টা। যার ওজন ৫০০ কেজি। আরও আছে ময়নামতিতে পাওয়া স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জ ও তামার তৈরি সামগ্রী, লোহার তৈরি সামগ্রী, মাটির তৈরি বিভিন্ন প্রকারের খেলনা, কাঠের কাজের নিদর্শন, তুলোট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পাণ্ডুলিপি, বিভিন্ন নমুনার মৃৎপাত্রসহ নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

চাইলে কুমিল্লা শহর থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। জাদুঘর থেকে বাসে বা অটোরিকশায় আসা যাবে। শহরের অন্যতম আকর্ষণ ধর্মসাগর। ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজা ধর্মমানিক্য কর্তৃক পানীয় জলের সুবিধার জন্য ১৪৫৮ সালে খনন করা বিশাল এ দীঘির পাশ দিয়ে বসার ও হাঁটার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। দীঘিতে বেড়ানোর জন্য ভাড়ায় নৌকাও পাওয়া যায়। দীঘির পাড়ে রেস্টুরেন্ট আছে। আর দীঘির পাশেই আছে কামাল উদ্দিন চৌধুরী শিশুপার্ক। পার্ক থেকে বের হলেই নজরুল ইন্সটিটিউট। সরকারি এ ইন্সটিটিউট নজরুল বিষয়ে কাজ করে থাকে। ইন্সটিটিউটের পাশেই আছে রাণীর কুঠি বার্ড অতিথিশালা (ড. আখতার হামিদ খান স্মারক বাসগৃহ)। এছাড়াও আসতে পারেন বীরচন্দ্র গণ-পাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। মহারাজ বীর চন্দ্রমাণিক্য বাহাদুর ১৮৮৫ সালে এ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়ও শহরজুড়ে নজরুল-রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতি আছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ ডিসেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়