ঢাকায় শীতের বাহারি পিঠার ধুম
ছবি : ছাইফুল ইসলাম মাছুম
ছাইফুল ইসলাম মাছুম : কোনোটির নাম ঝাল জামাই পিঠা, কোনোটির নাম মিষ্টি বউ পিঠা, আবার কোনোটির নাম গড়গড়া পিঠা, হৃদয়হরণ পিঠা, চুঙ্গি পিঠা, বাঁশ পিঠা, ডিম সুন্দরী পিঠা। হরেক রকম বাহারি নামে রকমারি সব পিঠা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এমন সব আজব নামের সুস্বাদু পিঠা নিয়ে পিঠা উৎসব চলছে (৩,৪,৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সড়ক দ্বীপে।
৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টায় পিঠা উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসজ্জামান খাঁন। পিঠা উৎসব চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।
গ্রামে শীত মানেই সুস্বাদু পিঠার মৌসুম। শীতের সকালে মায়ের হাতের গরম পিঠা না হলে দিনই শুরু হতো না। গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী পিঠা আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। ইট-পাথরের ব্যস্ত শহরে মায়ের হাতের দূরে থাক, পিঠা বলেই কিছু অবশিষ্ট নেই।
প্রাচীনকাল থেকে অঞ্চলভেদে বাংলাদেশে দুই শতাধিক প্রকার পিঠার প্রচলন ছিল। বিভিন্ন মৌসুমে, পারিবারিক-সামাজিক অনুষ্ঠানে পালা-পার্বণে পিঠা তৈরি করা হতো। সময়ের বিবর্তনে অনেক পিঠা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, অনেক পিঠা বিলুপ্তের পথে।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী রকমারি পিঠাকে নতুন প্রজন্ম ও শহরের মানুষদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে টিএসসির সড়ক দ্বীপে ২২তম জাতীয় পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ। নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, নেত্রকোনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পিঠা নিয়ে নিজ অঞ্চলের নামে মেলায় অংশ নিয়েছে ১৩টি পিঠাঘর।
বিপ্লব সরকার (৪০) পিঠা উৎসবে কুমিল্লার পিঠা নিয়ে, দিয়েছেন কুমিল্লা পিঠাঘর। তিনি জানান, ২২ বছর ধরে তিনি নিয়মিত এই পিঠা উৎসবে যোগ দিচ্ছেন। তার স্টলে ১২ আইটেমের পিঠা রয়েছে। তার মধ্যে নকশি পিঠা, বিবি খানা পিঠা, ঝাল জামাই পিঠা, মাল পোয়া, মিষ্টি বউ উল্লেখযোগ্য।
নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী পিঠা নিয়ে উৎসবে যোগ দিয়েছেন নুরুমিয়া (৩২)। তার স্টলের নাম নোয়াখালী চম্পা পিঠাঘর। তিনি জানান, তার পিঠা ঘরে রয়েছে পুলিপিঠা, চাইয়্যা পিঠা, খেজুর রসের পায়েস, পচাঁ পিঠাসহ ১৭ আইটেমের পিঠা। তিনজন কারিগর স্টলেই পিঠা তৈরি করছেন আর ক্রেতারা পাচ্ছেন গরম গরম পিঠা।
আমির হোসেন (৪৮) দিয়েছেন বরিশাল পিঠাঘর। তিনি নিজেই পিঠার কারিগর। বরিশালের ইলিশপিঠা, দুধ চিতলসহ তার স্টলে রয়েছে ১৩ আইটেমের পিঠা। আমির হোসেন জানান, তিনি রবীন্দ্র সরেবোর, কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিঠা বানানোর অর্ডার নেন।
রাজশাহীর ইলিয়াছ হোসেন (৩৫) পিঠা উৎসবে এসেছেন পরিবারসহ ঘুরতে। তিনি বলেন, পিঠা উৎসবে এসে শৈশবে খাওয়া মায়ের হাতের পিঠার কথা মনে পড়ছে। পিঠা উৎসবে আসা আরেক দর্শনার্থী রাজিব খান দিপু (২৭)। তিনি জানান, পিঠা উৎসবে এসে নানান ধরনের পিঠার স্বাদ নিচ্ছি। এমন অনেক পিঠা আছে, যে পিঠার নামও কখনো শুনিনি।
বরিশালের জেমস জনি ডি রোজারিও। তিনি গাজি টিভির ক্যামেরা পারসন। তিনি বলেন, গ্রামে মায়ের হাতে গরম গরম কাঁচি খোচা/চিতল পিঠা খেতাম। শহরে এসে কাঁচি খোচা পিঠা খুব মিস করছি। পিঠা উৎসবে এসেও কাঁচি খোচা পিঠা পেলাম না।
২২তম জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য রাকিব উদ্দিন প্রিন্স বলেন, বর্তমান প্রজন্মের কাছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহি পিঠাকে আবারও পরিচিত করিয়ে দেওয়ার জন্যই পিঠা উৎসবের আয়োজন।
তিন দিনের পিঠা উৎসবের প্রতিদিনই বিশেষ আয়োজনে রাখা হয়েছে পুঁথি পাঠ, বাউল গান সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। প্রতিদিনের পিঠা উৎসবের শেষ পর্বে রয়েছে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের পিঠা বিতরণ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন