ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুই ইলিশের ওজন ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম!

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুই ইলিশের ওজন ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম!

জুনাইদ আল হাবিব : ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নৌকা চালায় মাঝি। কোথায় ইলিশ মিলবে? সেই ভাবনা থেকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগ-দুর্বিপাকের ভয় জয় করে জেলেরা মেঘনায় নৌকা ভাসান। সেখান থেকে তুলে আনেন রুপালি ঝিলিক দেওয়া ইলিশ। ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে বিশ্বজুড়ে মেঘনা নদীর খ্যাতি রয়েছে। 

গত বুধবার নোয়াখালীর মেঘনা উপকূলে ইলিশ শিকারে যাওয়া এক নৌকায় মিললো ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজনের দুটি বড় ইলিশ। ইলিশ দুটি জেলেরা নিয়ে আসেন মাইজদি পৌর বাজারের আজিজুল হক মিয়ার মাছের আড়তে। সেখানে ইলিশ দুটির বাজার মূল্য হাঁকা হয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা!

‘এত বড় ইলিশ দেখে সবাই চমকে উঠি। মুহূর্তের মধ্যে মানুষের উপচে পড়া ভিড় জমে ইলিশ দুটি দেখতে। আমি অবাক হই, মেঘনা নদী থেকে এভাবে বড় বড় ইলিশ কীভাবে জেলেরা তুলে আনে? এটাও জেলেদের ভিন্ন কর্মদক্ষতা ও কৌশল। কারণ তারা কোথায় গেলে ইলিশ পাবে, সে বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।’ বলছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী মো. হাবিব উল্লাহ। মেঘনার বুক থেকে ইলিশ ধরা হয় নোয়াখালীর মাইজদী, সুবর্ণচর, হাতিয়া দ্বীপের উত্তর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, সদর, রায়পুর, ভোলার সদর, লালমোহন, চরফ্যাশন, মনপুরা এবং চাঁদপুরের হাইমচর অঞ্চলে। মেঘনার এ ইলিশকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, তৈরি হয়েছে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। বরফ কারখানা, ইলিশ ঘাটের হিসাব রাখাসহ নানা কাজে যুবকদেরও কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট ইলিশ ঘাট। সারাদেশের ইলিশ ঘাটগুলোর শীর্ষে রয়েছে এই ঘাট। প্রতিদিন এখান থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে রাজধানীসহ বিদেশে। পাশাপাশি নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চেয়ারম্যান ঘাট, ভোলার ইলিশা ঘাট, চাঁদপুরের চর ভৈরবী ইলিশ ঘাট মেঘনা তীরের অর্থনীতিতে বিরাট সম্ভাবনার ছোঁয়া এনে দিয়েছে। এসব ইলিশ ঘাট দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মতিরহাট ইলিশ ঘাটের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান লিটন বলেন, ‘ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উদ্যোগেরও সংকট রয়েছে। যেমন ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জেলেদের জীবনের সুরক্ষা খুব জরুরি। জেলেরা লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই নদীতে ছুটে যায়। আবার জলদস্যুদের ভয়তো আছেই। এসব বিষয়ে নজরদারির অভাব আছে। অভিযান চলাকালে জেলেদের জন্য চালের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ঈদেও জেলেদের জন্য কিছু বাজেট রাখতে হবে এবং খাস জমিগুলো জেলেদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।’ ইলিশ উৎপাদনে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অঞ্চল এগিয়ে থাকলেও ক্ষোভ আছে জেলা ব্র্যান্ডিং নিয়ে। নোয়াখালী পেজ পরিচালনা কমিটির স্থায়ী সদস্য মো. ওয়াসিম জামিল বলেন, ‘নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের জলসীমাতেই বেশির ভাগ ইলিশ ধরা পড়ে কিন্তু এখানে ইলিশ সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা নাই। বড় কোনো আড়ত নাই, হিমাগার নাই। যার কারণে ইলিশের বাড়ি হিসেবে চাঁদপুর পরিচিতি লাভ করেছে অথচ ইলিশের বাড়ি লক্ষ্মীপুর হওয়ার কথা।’

নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবদুল মোতালেবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) ও সবার সহযোগিতার কারণে ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, জাটকা ইলিশও সুরক্ষা পাচ্ছে। এজন্য এসব অঞ্চলে বড় বড় ইলিশের দেখা মিলছে। সামনের পূর্ণিমায় ইলিশ বেশি ধরা পড়বে। সমস্যা হচ্ছে আবহাওয়াটা আমাদের অনুকূলে নেই। ঠিকমত বৃষ্টিরও দেখা মেলে না। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও এমন ইলিশ নিয়ে আমরা আশাবাদী।’ লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম মুহিবুল্লাহ বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে ইলিশের উৎপাদন বেশ অবাক করার মতো। লক্ষ্মীপুরকে অন্যান্য জেলার মানুষ ‘ইলিশের লক্ষ্মীপুর’ হিসেবে চেনে। কারণ এ জেলার চারটি উপজেলার মেঘনা উপকূল থেকেই ইলিশ আহরণ করা হয়।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়