ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না সুমনের

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৩০ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না সুমনের

মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : নিহত বিজিবি সদস্য সুমন মিয়ার নতুন বাড়িতে ওঠা হলো না। তিস্তার নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে তার নতুন বাড়ি।

জানা গেছে, সুমনের বাবা মারা গেছেন প্রায় তিন মাস আগে। এর আগে তিনি বাড়ির পাশের একখণ্ড জমি সুমনকে দিয়ে যান। সেখানে নতুন একটি বাড়ি তৈরি করেছিল সুমন। কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস। কিছুদিন পর ওই বাড়িতে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু সেই বাড়িতে আর ওঠতে পারলেন না তিনি।

এদিকে, তার মৃত্যুর খবরে শোকে পাথর তার স্ত্রী জেসমিনও। বারবার হারিয়ে ফেলছেন জ্ঞান। সান্ত্বনা খোঁজে পাচ্ছেন না তার পরিবারের সদস্যরাও।

সুমনের বড় ভাই আশিক মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘একটি নতুন বাড়ি তৈরি করেছিল আমার ভাই। কিছুদিন পর তার ওই বাড়িতে ওঠার কথাও ছিল। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না তার।’

তিনি আরো বলেন, সুমনের লাশ উদ্ধারের খবরে পুরো পরিবার স্তব্ধ হয়ে গেছে। অন্য কাউকে সান্ত্বনা দেব কি, নিজেই মনে কোনও সান্ত্বনা খোঁজে পাচ্ছি না।

সুমনের শ্বশুর আবুল ফজল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সুমনের লাশ উদ্ধারের খবর শোনার পর থেকে আমার মেয়ে জেসমিন আক্তার বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। শোকে অনেকটা পাথর হয়ে গেছে সে। আগামী কয়েক মাস পর আমার মেয়েকে নিয়ে নতুন বাড়িতে ওঠার কথা ছিল সুমনের।’

সুমনের চাচাতো ভাই কবির মিয়া বলেন, ‘আমার চাচা আব্দুল হেকিম (সুমনের বাবা) প্রায় তিন মাস আগে মারা গেছেন। এর আগে তিনি সুমনকে বাড়ির পাশের একখণ্ড জমি দিয়ে যান, সেখানে সুমন নতুন একটি বাড়ি তৈরি করেছিল। সে বাড়িতে আর ওঠতে পারল না সুমন।’

নিহত সুমনের বন্ধু সোহেল মিয়া বলেন, মৃত্যুর খবর বিশ্বাস করতে পারছি না। এই অকাল মৃত্যুতে মেনে নিতে পারছি না।

নিহত সুমন ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে বিজিবিতে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গাতাবলা গ্রামের প্রবাসী আবুল ফজল মিয়ার মেয়ে জেসমিন আক্তারকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তার দাম্পত্য জীবন সুখেই ছিল। তাদের কোনো সন্তান নেই।

উল্লেখ্য, ২৬ জুন ঈদের দিন রাতে দহগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টহল দল তিস্তা নদীর আবুলের চর এলাকায় চোরাকারবারিদের প্রতিহত করতে যান। টহল দলে ছিলেন ল্যান্স নায়েক টুটুল মিয়া, ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়া ও সিপাহী উচ্চ প্রু মারমা। আবুলের চর এলাকায় তিস্তা নদীর কিনারে চোরাকারবারিদের সঙ্গে গরু টানাটানির একপর্যায়ে টুটুল মিয়াকে নদীতে নামানো হয়। চোরাকারবারিরা গরুর রশি ছেড়ে দিলে টুটুল মিয়া দুটি গরু নিয়ে চরে ফিরে আসছিলেন। টুটুল মিয়া তলিয়ে যাচ্ছে ভেবে তাকে উদ্ধারে সুমন মিয়া তিস্তা নদীতে নামেন। পরে টুটুল মিয়া তীরে উঠতে পারলেও সুমন মিয়া নিখোঁজ হন।

পরে মঙ্গলবার ভোর থেকে তাকে উদ্ধারে বিজিবি, বিএসএফ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীতে অভিযান চালায়। ৩২ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ১০টার দিকে দহগ্রামের আবুলের চর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাটিতে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশ থেকে ল্যান্স নায়েক সুমন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে বিএসএফ। দুপুর ২টার দিকে ভারতের দরুন ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা সুমন মিয়ার লাশ হস্তান্তর করেন।


আরো পড়ুন





রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/৩০ জুন ২০১৭/মামুন চৌধুরী/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়