ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কিশোরীর দল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১৭ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কিশোরীর দল

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : কুড়িগ্রামের নেওয়াশী ইউনিয়নে নয়টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছেন আরজিন আক্তর। আরজিন শুনালেন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের গল্প- ‘বিয়ের সব আয়োজন চলছিল। কিন্তু মেয়ের বয়স মাত্র ১২ বছর। যুব ফোরাম প্রসাশনকে জানালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে হাজির হয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেন। অল্পের জন্য বাল্যবিবাহ থেকে বেঁচে যাওয়া মেয়েটি এখন কলেজে পড়ছে।’

‘সরকার বলছে মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেওয়া যাবেনা। কিন্তু আমার বান্ধবী কিংবা ছোটবোনেরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। বাল্যবিবাহ গোপনে হচ্ছে, সমাজ ও পরিবারের চাপে তারা রাজি হতে বাধ্য হচ্ছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত আমি নিজেই পাঁচটি বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছি’। বলছিলেন কুড়িগ্রামের বেলবাড়ি যুব ফোরামের সহ সভাপতি কলেজ পড়ুয়া সোমি সরকার।

কেবল আরজিন কিংবা সোমি সরকার নয়, এমন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের গল্প শুনালেন মিরা সাহা, মিতা বেগম, দুলালী পারভিনসহ অনেকে। এভাবে দেশের বাল্যবিবাহ প্রবণ জেলা কুড়িগ্রামে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভূমিকার রাখছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণীরা। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ও ইউএনডিপি হিউম্যান রাইটস এর আয়োজনে কুড়িগ্রাম ফিল্ড ভিজিটে গিয়ে কথা হয় ওদের সাথে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তরুণ-তরুণীরা বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস এর সহযোগিতায় এলাকাভিত্তিক গড়ে তুলেছেন ‘যুব ফোরাম’। যুব ফোরাম উঠান বৈঠক করে, গানের মাধ্যমে, অভিনয়ের মাধ্যমে অভিভাবক ও তরুণ-তরুণীদের বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলে। সংস্থাটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘কেবিনেট’।

স্কুল কেবিনেট সদস্য এরিন রহমান তরী। তিনি নাগেশ্বরী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তরী বলেন, ‘বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে কেবিনেট কাজ করে। মেয়েদের মনোবল বাড়াতে সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতাসহ নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্কুল কেবিনেট। কেবিনেটের সদস্যরা স্কুলে বাগান তৈরি করে, মেয়েদের জন্য আলাদা নামাজ ঘর, কমন রুম, ওয়াশ রুম তৈরি। মেয়েদের সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে।’

এরিন রহমান তরী আরো বলেন, ‘বাল্যবিবাহ হচ্ছে সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা প্রচন্ড স্বাস্থ্য ঝুকিঁর মধ্যে পড়ে। পড়ালেখা ব্যহত হয়। কম বয়সে বাচ্চা প্রসবের কারণে অনেকে মারা যায়। কেউ মৃত শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দেয়। পুষ্টিহীনতায় ভুগে।’

কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ অক্টোবর ২০১৭ সাল থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত উপজেলায় ৯১টি বাল্যবিবাহ রোধ করা হয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শঙ্কর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে আমার মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। তারা বাল্যবিবাহের খবর পেলেই আমাকে কল দেয়, এসএমএস করে। সবার সহযোগিতায় নাগেরশ্বরী উপজেলায় বাল্যবিবাহ ৭০% কমে গেছে।’

শিশু অধিকার নিশ্চিত করা ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহীদ মাহমুদ বলেন, ‘সামাজিক নানান উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি বাড়লেও, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন আসেনি। বাল্যবিবাহে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।’ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারকে আরো তৎপর হওয়ার আহবান জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়