ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বাহারি ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস

ইমানুল সোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাহারি ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস

ইমানুল সোহান : পূর্ব আকাশে সূর্যের ঝলকানি, হলের বারান্দায় শালিকের ডাকাডাকি! সেই ডাকে ঘুম ভাঙে হাজারো শিক্ষার্থীর। দরজা কিংবা জানালা দিয়ে তাকালেই চোখে পড়ে সূর্যমুখীর হাসি। নিজেকে উজাড় করে দুহাতে প্রার্থনার অবয়বে আকাশ পানে তাকিয়ে রয়েছে ফুলটি। যা শিশিরের ক্ষুদ্রকণা আর সূর্যের ঝলকানিতে জ্বলজ্বল করতে থাকে। যে দৃশ্য দেখে মন জুড়োয় অসংখ্য শিক্ষার্থীর।

সকালের হালকা শীতের হাওয়ায় দুলতে থাকে বাহারি রকমের ফুল। টকটকে লাল, হলুদ কিংবা খয়েরি ফুলের সমাহারে যেন সুসজ্জিত একখণ্ড ক্যাম্পাস। ১৭৫ একর ক্যাম্পাসে যেন প্রকৃতি তার আপন সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে বসেছে। বলছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ নীলাভূমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহারি রঙের ফুলের গল্পকথা। বলা হয় এ ক্যাম্পাসের মাটি নাকি খুবই উর্বর। কথাটি নিতান্তই সত্য। এ সত্যতার প্রমাণ মিলে ক্যাম্পাসে বাহারি ফুলের সমাহার দেখলে। যে দিকেই চোখ ফিরাবেন, সে দিকেই বাহারি রঙের মনোমুগ্ধকর ফুলের সারি দেখতে পাবেন। সেই ফুলের গন্ধে যে কেউ মুগ্ধ হবে অনায়াসেই।

বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের বাগান। বিশেষ করে প্রশাসন ভবনের সামনে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, টিএসসির ভিতরে, প্রকৌশল ভবনের সামনে, ডায়না চত্বরে, প্যারাডাইস রোড দুপাশে, বিভিন্ন অনুষদের অভ্যন্তরসহ প্রত্যেকটি হলের ভিতর ও সামনের অংশে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। এসব বাগানে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, জুঁই, টগর, বেলি, সাইকাস, জবা, পলাশ ও পাতাবাহার অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ফুলের সঙ্গে সখ্যতা করতে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে ভিড় করছে অসংখ্য দর্শনার্থী।



বাহারি ফুলের এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাই ফুলের সুবাস নিয়ে ঘুমাতে যায়, একইসঙ্গে ফুলের সুবাসে শুরু করে সকালটাও। ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফি পেজটিতে চোখ বুলালেই তা অনুমেয়। নিজের স্মার্টফোন কিংবা ক্যামেরার ফ্রেমে পছন্দের ফুলের ছবি তুলে তা ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফিতে আপলোড করা। এছাড়াও প্রিয়তমার জন্য ফুল চুরির বিষয়টি তো আছেই। প্রিয়তমার হাতে শিশির মিশ্রিত ফুলটি তুলে দিতে ভোরবেলায় ঘুম ভাঙে অনেক প্রেমিকের। খুব যত্ন করে ফুল সংগ্রহ করে প্রিয়তমার হাতে ফুল তুলে দেওয়ার অনুভূতিটুকু হয়তো ভিন্ন।

তবে এতসব ফুলের পরিচর্যার দায়িত্বে একটি মানুষ নিরলস পরিশ্রম করে যান। নাম আলতাফ হোসেন। বয়সটা ৫০ এর কাছাকাছি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ক্যাম্পাসে ফুলের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন তিনি। ফুল গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার হৃদয়ে নাকি রক্তক্ষরণ হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা রোদ কিংবা বৃষ্টিতে সার্বক্ষণিক ফুল গাছের সঙ্গে সখ্যতা তার। তিনি শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের ফুল তুলতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন ফুল হচ্ছে সৌন্দর্যের প্রতীক। যা ফুল গাছে শোভা পায়, হাতে নয়।

বাহারি ফুলের সুসজ্জিত ক্যাম্পাস সম্পর্কে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের সাখাওয়াত হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঋতু বদলের সঙ্গে ক্যাম্পাসটির রূপও বদলে যায়। মাত্র কয়েকমাসে ক্যাম্পাসটি হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ক্যাম্পাসের যে দিকেই তাকাই সে দিকেই বাহারি ফুল দেখতে পাই। যা আমাকে মুগ্ধ করে।’



বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহবুবা মোহিনী বলেন, ‘চারিদিকে ফুল আর ফুল। ক্যাম্পাসে আসলেই ফুলের গন্ধে মন ভরে যায়। এর মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও সেলফিতে সময়টা বেশ ভালো কাটে।’

এরকম অনুভূতির কথা শুনতে চাইলে হয়তো শুনেও শেষ করা যাবে না। তাই বলতে গেলে ১৭৫ একর বিস্তৃত ক্যাম্পাসটি বাহারি ফুলের সুসজ্জিত এক ক্যাম্পাস।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়