ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভয়ানক ১২ কামড়

মাহমুদা মিতুল ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ১০ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভয়ানক ১২ কামড়

এঁটেল পোকা

মাহমুদা মিতুল ইভা : কিছু প্রাণীর কামড়ে মানুষের প্যারালাইসিস হওয়া থেকে শুরু করে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং এসকল প্রাণীর কামড় থেকে যথাসম্ভব সাবধান থাকুন।

* বিড়াল
আপনার আদুরে বিড়ালের ছোট্ট একটা কামড় হয়তো আপনার আঙুলে নিতান্ত সামান্য ক্ষত তৈরি করবে। এই সামান্য ক্ষতই চরম সংক্রামক পর্যায়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা ৮০ শতাংশ বিড়ালের কামড় থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। ফলে আপনি বার্টোনেলা হেনসিলি নামক জ্বর কিংবা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা বিড়ালের আঁচড় বা কামড় থেকে হয়ে থাকে এবং বিরল ক্ষেত্রে তা হাড়ে পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটায়। তাছাড়া বিড়ালের কামড়ে পাস্টুরিলা মালটোসিডা নামক সংক্রামক ব্যাধি হয়, যার ফলে নিউমোনিয়া হতে পারে।

* মানুষ
মানুষের মুখগহবর অত্যন্ত নোংরা একটি জায়গা। ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের জিহ্বা এবং দাঁতে ৭০০-রও বেশি বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জীবিত অবস্থায় থাকে; যার মধ্যে প্রতিটি মানুষের গড়ে ২০-৭২ ধরনের সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, মানুষের কামড়ের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের রোগ হতে পারে। হেপাটাইটিস বি এবং সি, হার্পিস, টিটেনাস এবং এইচআইভির মতো মারাত্মক ব্যাধি মানুষের কামড়ের ফলে হওয়া সম্ভব। সুতরাং, কারো সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা বা রাগ যাই হোক, কামড় দেওয়ার মতো কাজ করবেন না বা কাউকে করতে দেবেন না।

* বানর
আপনি চিড়িয়াখানায় কাজ না করলে এবং আপনার বাড়ির আশেপাশে বানরের উৎপাত না থাকলে আপাতত বানরের কামড় খাওয়ার আশঙ্কা আপনার নেই। পৃথিবীতে বর্তমানে ২৬০ প্রজাতির বানর রয়েছে যাদের যেকোনো একটির কামড়ে ছড়াতে পারে মারাত্মক জীবাণু র‍্যাবিস; যার ফলে প্রথমে আংশিক প্যারালাইসিস, দৃষ্টিভ্রমের মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং চিকিৎসা না করা হলে যার পরিণতি অনিবার্য মৃত্যু। তাছাড়া বানরের কামড়ের ফলে হার্পিস নামক সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে। বানরের কামড়ে হওয়া হার্পিস পরবর্তীতে এনসেফালোমাইয়েলিটিসে রূপ নেয় যার লক্ষণ হচ্ছে বমি, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়া এবং প্যারালাইসিস।

* এঁটেল পোকা
ক্ষুদ্রকায় এই পোকা যার আকার সামান্য কলমের অগ্রভাগের সমান; সকল ধরনের রোগের জীবাণু বহন করে থাকে। প্রতি বছর লাখো আমেরিকান এই এঁটেল পোকার কারণে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের শিকার হয়। আপনি কোথায় বাস করেন এবং আপনার বাড়ির আশেপাশে কোন প্রজাতির এঁটেল পোকার বসবাস রয়েছে তার উপর নির্ভর করে বিভিন্নরকম রোগে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন: অ্যানাপ্লাসমোসিস, বেবসিওইসিস, কলোরাডো জ্বর, লাইম রোগ, পোয়াসান এনসেফালিটিস, ফুসকুড়ি এবং কিউ জ্বর। এই রোগগুলো শরীরে ফুসকুড়ি এবং জ্বরের সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রচন্ড শারীরিক ব্যথা, ক্ষত এমনকি নানাবিধ স্নায়ুবিক সমস্যাও তৈরি করে।

* ডোরাকাটা হায়েনা
প্রাণীদের মধ্যে মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী কামড় হচ্ছে, হায়েনার। যার কামড়ে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ১০০০ পাউন্ডের মতো চাপ সৃষ্টি হয়। ডোরাকাটা হায়েনার দাঁত এবং চোয়াল এতোটাই শক্তিশালী যে, এদের কামড়ে হাড় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব ইমার্জেন্সি সার্জারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হায়েনারা চেহারা, ঘাড় এবং সারভিকাল হাড়ে আক্রমণ করে যেখানে তাদের শক্তিশালী কামড়ের ফলে নরম টিস্যু এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি হায়েনার কামড়ের ফলে মাথা থেকে ধড় আলাদা হওয়া মানুষও দেখা গেছে।

* ব্রাজিলিয়ান মাকড়সা
কিছু প্রাণীর কামড় তেমন একটা শক্তিশালী নয়, কিন্তু মারাত্মক হচ্ছে, তাদের বিষ। এমনই একটি প্রাণী হচ্ছে, ধূসর বর্ণের এই ব্রাজিলিয়ান মাকড়সা। যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই প্রজাতির মাকড়সাগুলোর দেহে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নিউরোটক্সিন বিষ রয়েছে এবং এগুলোর কামড়ে ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং প্যারালাইসিস অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা অনিবার্য মৃত্যুর প্রকৃষ্ট লক্ষণ।’ যদিও এই মাকড়সার কামড়ে মৃত্যুর হার বেশ কম। মাকড়সাটির প্রজাতির নাম ‘ফোনিউট্রিয়া’ যার গ্রিক অর্থ ‘হত্যাকারী’।

* ব্রাউন সাপ
বাদামি রঙের এই সাপ বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত সাপ এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় এলাকায় এই সাপ রয়েছে। সেখানে এই সাপের কামড়ে প্রতিবছর বেশকিছু সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়। সাপের বিষ গবেষক জিওফ ইসবিস্টার বলেন, ‘সাপটির কামড়ে অত্যন্ত শক্তিশালী এক বিষ নির্গত হয় যার ফলে হুট করে রক্তচাপ নেমে যায়, রক্তপাতের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অবশেষে কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আসে।’ মানুষ সাধারণত এই সাপকে উক্ত্যক্ত করার কারণেই কামড়ের শিকার হয়।

* জলহস্তী
স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকানরা বিশ্বাস করে যে জলহস্তীরা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ভয়ানক প্রাণী। বিশালাকৃতির জলহস্তীদের কামড় এতোটাই শক্তিশালী যে, কামড় দিয়ে কোনো মানুষের মাথা ছিঁড়ে ফেলা এদের পক্ষে কোনো ব্যাপারই নয়। প্রকান্ড এই প্রাণীটি কামড়ের মাধ্যমে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ২০০০ পাউন্ড চাপ সৃষ্টি করে এবং এদের মুখ ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। জলহস্তীর কামড়ের শিকার হওয়া এক ব্যক্তি ডেইলি নিউজকে বলেন, ‘আমি একবার জলহস্তীর আক্রমণের শিকার হয়ে একটি হাত হারিয়েছি। কামড়টি এতোটাই মাতাত্মক ছিল যে আমার ফুসফুস দেখা যাচ্ছিল।’

* শঙ্খচূড় বা  রাজ গোখরা সাপ
সান ডিয়েগোতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজ গোখরার (ইংরেজি ভাষায় কিং কোবরা নামে পরিচিত) কামড়ে ৩০ মিনিটের মধ্যে যে কারো মৃত্যু ঘটতে পারে। আকারে বেশ বড় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক সাপ হচ্ছে, রাজ গোখরা। মাত্র একটি কামড়ে সাপটি প্রচুর পরিমাণে বিষ নির্গত করে থাকে, যা ২০ জন মানুষ মারার জন্য যথেষ্ট। সাপটির কামড়ে বেশকিছু মারাত্মক লক্ষণ দেখা দেয়। যেম: প্যারালাইসিস, বমি, খিঁচুনি, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং কিডনির সমস্যা। এই সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পেতে হলে খুব দ্রুত ঠিকঠাকভাবে বিষনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

* আমেরিকান কুমির
ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মতে, এই প্রজাতির কুমিরগুলোর ৮০টি শক্তিশালী দাঁত রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা শিকার ধরা এবং শিকারকে আহারযোগ্য আকারে পরিণত করার কাজ অনায়াসে করতে পারে। এদের কামড় এতোটাই শক্তিশালী যে, কচ্ছপের খোলকও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এই প্রজাতির কুমিরের আক্রমণের শিকার হলে মৃত্যু প্রায় অবধারিত। এদের আক্রমণের পর কেউ যদি বেঁচেও যায়, তাকে মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হতে হয়; কেননা এই কুমিরের পূর্ববর্তী শিকার হতে বেশ কিছু অণুজীব পরবর্তী শিকারে সংক্রমিত হয়ে যায়।

* লোনা পানির কুমির
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্য যেকোনো প্রাণীর তুলনায় লোনা পানির কুমিরের কামড় অনেক বেশি শক্তিশালী এবং মারাত্মক। এই প্রজাতির প্রাণীটির দাঁত বা মুখের আকার নয় বরং চোয়ালে অবস্থিত অত্যন্ত শক্তিশালী পেশী এরকম কামড়ের জন্য দায়ী। এদের কামড় এতোটাই শক্তিশালী যে, প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩০০০ পাউন্ড চাপের সৃষ্টি হয়। এই কুমিরের আক্রমণের শিকার হলে কোনো মানুষের বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

* মশা
মশার কামড় মানুষের কাছে মোটামুটি অগ্রাহ্য ব্যাপারই বটে। তবে গবেষকদের মতে মশাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণী। কেননা মশার কামড়ের মাধ্যমে নানারকম মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর শুধুমাত্র ম্যালেরিয়াতে চার লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। তাছাড়া চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, পীতজ্বর, জাপানি এনসেফালাইটিস এবং জিকা ভাইরাসের মতো মারাত্মক রোগ মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্বের লাখো মানুষের জীবনে ধ্বংসাত্মক পরিণতি নেমে আসছে একমাত্র মশার কামড়ের ফলে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়