ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ম্যাজিশিয়ান রাজু

খাদিজা খাতুন স্বপ্না || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ৩০ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ম্যাজিশিয়ান রাজু

সাজেদুর রহমান রাজু

খাদিজা খাতুন স্বপ্না : রাজু নামটা শুনলেই মিনা-রাজুর কার্টুনের কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু এই রাজু মিনা-রাজু কার্টুনের রাজু না হলেও তার একটা গল্প আছে। তাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আপনি কি করেন উত্তরে তিনি বলেন, ‘আই এম এ ম্যাজিশিয়ান’ মানে তিনি একজন জাদুশিল্পী। জাদুকর বা ম্যাজিশিয়ান হওয়ার পিছনের গল্পটা খুব সহজ ছিল না।

কোনো এক ছুটির দিনে স্থানীয় এক মেলায় ঘুরতে বেরিয়েছিলেন মায়ের হাত ধরে। ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে পড়েন। বাচ্চা বয়স আর কতই হবে, বড় জোর ৬-৭ বছর হবে। মেলার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরতে ঘুরতে দেখলেন জাদুখেলা হচ্ছে। এক জাদুকর আপন মনে জাদু দেখিয়ে যাচ্ছেন। দর্শকবৃন্দও হাততালি এবং বাহবাহ দিয়ে উপভোগ করছে তার ম্যাজিক বা জাদু। কিন্তু ছোট্ট ছেলে রাজু শুধু ভেলকিবাজি দেখতে নয়, জাদু শেখার পণও করে বসলেন মনে মনে।

ওইদিন মেলায় জাদু দেখে তিনি পণ করেছিলেন তিনিও জাদু দেখাবেন, মানুষকে আনন্দ দেবেন। বই কিনে জাদুবিদ্যা শিখবেন। কিন্তু তাঁর মা কিছুতেই রাজি হয় না। অনেক বোঝানোর পর মা কে রাজি করে কিনে ফেললেন জাদুবিদ্যা শেখার কিছু বই। যেখানে প্রতিযোগিতার এই যুগে সমাজের আর দশটা ছেলে প্রতিযোগিতার যুদ্ধে নেমে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেখানে ছেলেকে কেউ অহেতুক জাদুর বই কিনে দিয়ে ছেলের ভবিষ্যতটাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে না। তবুও অনেক কষ্টে মাকে রাজি করে কেনা বইগুলো পড়তে শুরু করলেন গোপনে গোপনে। সেই সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আয়ত্ত করতে শুরু করলেন কাঙ্ক্ষিত জাদু খেলা। প্রথম দিকে স্কুল কলেজের সহপাঠীদের নিজের আগ্রহে জাদু দেখালেও আজ তিনি জাদু দেখাচ্ছেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলসহ বিভিন্ন শপিংমল, বিয়ের অনুষ্ঠান এমনকি দেশের বাইরেও। সম্প্রতি তিনি ভারতেও ম্যাজিক শো করছেন।

মানুষকে আনন্দ দিতে ও মানুষের মুখে বিস্ময়ের ছাপ দেখতে পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা হওয়া মাইক্রোবায়োলজিস্ট রাজু বলেন, ‘আসলে, জাদু দেখিয়ে মানুষকে ভেলকিবাজির গোলক ধাঁধায় ফেলে আনন্দ দেওয়ার মতো ভালোলাগার কাজ আমার কাছে আর কিছু হতে পারে না। আমার বিশ্বাস, একদিন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই হাসি-আনন্দের জাদু রাজ্যে নিজেকে মেলে ধরতে পারব। পারব বাংলাদেশের রাজু হয়ে বিশ্বের নানা দেশের মানুষকে হাসি-তামাশার রং মেখে হারিয়ে নিয়ে যেতে ক্ষণিকের তরে। আর, সেদিনই পাব আমার স্বপ্নরাজ্য।’



তিনি আরো বলেন, ‘শুধু জাদু দেখিয়ে আনন্দ দেওয়া নয় বরং মানুষ যেন জাদুটাকে নিয়ে ভাবে কিভাবে এমন হলো তাহলেই আমার জাদুবিদ্যার সার্থকতা।

তার সঙ্গে যখন আমার কথা হচ্ছিল তখন তিনি আমাকে সামনাসামনি ২/৩টা ম্যাজিক অর্থাৎ জাদু দেখিয়েছিলেন। এতো কাছ থেকে জাদু দেখার সৌভাগ্য কখনো হয়নি। জাদু বলতে আমি টিভিতে যে ম্যাজিক শো হয় ওইগুলোই দেখেছি কিন্তু ওইদিন এতো কাছে থেকে জাদু দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আসলেই এমনটা হয়। জাদুগুলো এমন ছিল- আমার হাতের আংটি এবং পেন দিয়ে জাদুটা, আংটি খুলে আমার তালুর ওপর রাখলেন এবং কলমটা ওপরে ঘুরালেন হঠাৎ আংটি টা কলমের মধ্যে থাকে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আরেকটি জাদু ছিল যে, ১০ টাকা থেকে ১ টাকা হয়ে গিয়েছিল সেকেন্ডের মধ্যেই। আরো একটা অবিশ্বাস্য জাদু যেটা আমি আমার প্রিয়জনকে মনে করলাম অথচ মনে হচ্ছিল সে আমার হাত ধরে আছে আমাকে স্পর্শ করছে।

রাজু শুধু জাদুবিদ্যাতেই পারদর্শী না, বরং এর পাশাপাশি তিনি একজন ভালো পেইন্টার, অভিনেতা, পারেন বাঁশি বাজাতে এবং নানারকম মুখরোচক খাবার রান্না করাতেও তিনি পারদর্শী। তার পুরো নাম সাজেদুর রহমান রাজু। পড়ালেখা করেছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়