ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যেখানে সেরা দৌড়বিদরা জন্মান

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ৯ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেখানে সেরা দৌড়বিদরা জন্মান

দূরপাল্লার দৌড়ের ইভেন্টগুলোতে কেনিয়ার দৌড়বিদদের খ্যাতির কথা কমবেশি সকলেরই জানা। বছরের পর বছর তারা পৃথিবীর সেরা সব ম্যারথন ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে জন্মানো এই সকল খ্যাতিমান দৌড়বিদদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে অমিল থাকলেও একটি বিষয়ে কিন্তু দারুণ মিল! তা হলো সবাই কেনিয়ার কালেনজিন গোত্রের সদস্য।

কালেনজিন গোত্রকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সেরা সব দৌড়বিদদের জন্ম গোত্র। পরিসংখ্যানও তাদের পক্ষে কথা বলে। ১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিকের পনেরোশ মিটারের সোনা জয়ী কিপ কেইনো, ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের আটশ মিটারের সোনা জয়ী ডেভিড রুডিশা, বার্লিন, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ফ্রাঙ্কফুট ম্যারাথনে সোনা জয়ী উইলসন কিপসং, শিকাগো ম্যারাথনে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ডেনিস কিমিটো, লন্ডন ম্যারাথন জয়ী সামী ওয়ানজিরোর মতো দৌড়বিদের জন্ম এই গোত্রে। তবে প্রথম স্থান অধিকারী এই সব দৌড়বিদ ছাড়াও অধিকাংশ মধ্য ও দূর পাল্লার দৌড়ে কেনিয়ার দৌড়বিদরা হরহামেশাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

কালেনজিনরা সংখ্যায় মাত্র পাঁচ মিলিয়ন। কেনিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ। অথচ গত ৩৫-৪০ বছরে দূরপল্লার দৌড়ের ৪০ শতাংশ শিরোপা জিতেছে এই গোত্রের কেউ না কেউ। এছাড়া অলিম্পিকে কেনিয়া এই পর্যন্ত মোট ৮৬টি পদক জিতেছে, যার মধ্যে ৭৯টি এসেছে দূরপাল্লার দৌড় থেকে।

বিজ্ঞানী, গবেষক ও ক্রীড়াবিদরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন গোত্রটি নিয়ে। তাদের প্রশ্ন কী এমন রয়েছে এই গোত্রটির মাঝে, যা তাদের এরকম দৌড়াতে সাহায্য করে। বেশকিছু গবেষণা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষকরা কালেনজিনদের সফল দৌড়বিদ হওয়ার পিছনে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।

প্রথমত, ভৌগলিক দিক থেকে এই গোত্রটির অবস্থান। কালেনজিনদের বলা হয় অধিক উচ্চতার অধিবাসী। তারা উচ্চতায় বসবাস করে  এবং অধিকতর উচ্চতায় দৌড়ের প্রশিক্ষণ নেয়, সেকারণেই তারা দূর পাল্লার দৌড়ে খুব ভালো। কারণ অধিক উচ্চতায় যারা বসবাস করেন তাদের রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে তারা বেশি দম নিয়ে দূর পাল্লার দৌড়ে সফল হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, তাদের শারীরিক গড়ন ও খাদ্যাভাস। কালেনজিনদের খাবারে শর্করার প্রাধান্য থাকে। এরা মেদহীন, হালকা লিকলিকে এবং একহারা গড়নের। এরকম শরীর খুব সহজে তাপ শুষে নিতে পারে। এই কারণে তারা দীর্ঘক্ষণ দৌড়াতে পারেন। এদের পায়ের গোড়ালি বেশ ছোট, যা দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য একেবারে যথার্থ।

কালেনজিনদের যাপিত জীবনও তাদের দৌড়বিদ হওয়ার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে। কারণ এই গোত্রের অধিকাংশ শিশু প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যায়। এছাড়া দুধ সংগ্রহ করতে হলে তাদের কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। ফলে ছোটবেলা থেকেই তাদের পা দৌড়ানোর উপযোগী হয়ে গড়ে ওঠে। এছাড়া কালেনজিন শিশুদের ছোট থেকেই কষ্ট সহিষ্ণু করে মানুষ করা হয়। এই জন্য তারা নানান উপায় অবলম্বন করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—  ছেলে শিশুদের খৎনা করার পর দৌড়ানোর অভ্যাস করা। যা তাদের অনেক বেশি কষ্ট সহিষ্ণু করে তোলে। অবশ্য বর্তমানে তারা এই প্রথা থেকে সরে আসছে।

গবেষকদের দেওয়া আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে, কালেনজিনরা দরিদ্র অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যেও নিজেদেরকে দৌড়বিদ হিসেবে তৈরি করে। কারণ কেনিয়ার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এমতাবস্থায় একজন সাধারণ কেনিয়ানের সফল দৌড়বিদ যখন বিদেশে কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ পুরষ্কার হিসেবে জিতে আনে তখন আরেকজন তাকে দেখে অনুপ্রাণীত হয়। যুগ যুগ ধরে তাদের এই ধারা বিদ্যমান।

গবেষকরা বলছেন, কালেনজিনদের দৌড়বিদ হওয়ার এই প্রথা ভাঙা খুব একটা সহজ কাজ হবে না। ফলে আরও কয়েক যুগ তাদের মাঝে দৌড়বিদ হওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান থাকবে। কারণ সামাজিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিক দিক মিলিয়ে প্রতিটি কালেনজিন শিশু খুব ছোট থেকেই দৌড়ে তাদের স্বপ্নকে ছোঁয়ার চেষ্টায় রত হয়।

 

ঢাকা/মারুফ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়